সাতক্ষীরায় এক প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে মাসে কমপক্ষে একবার চাউল, আটা ও তেল দেয়ার নামে গ্রাহক প্রতি ২১০ টাকা হারে প্রায় ৫হাজার অসহায় দরিদ্র গ্রাহকের কাছ থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মৃত মফেজ উদ্দিন শেখের ছেলে ইমান হোসেন (৫০) বাদি হয়ে গত ২৯ মার্চ সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারি আশাশুনি উপজেলার কেয়ারগাতি গ্রামের মৃত শিবপদ অধিকারীর ছেলে কার্তিক অধিকারী ওরফে শামিম ইসলাম (নব মুসলিম) (৫৫) ও তার স্ত্রী মোছাঃ ফজিলা খাতুন (৫০)। প্রতারনার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যে আসামী কার্তিক অধিকারী ওরফে শামিম ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শামিম ইসলাম ও তার স্ত্রী ফজিলা খাতুন গত প্রায় দুই মাস আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় এসে অসহায়, গরিব ও দুস্থঃদের মাঝে চাউল, আটা ও তেল ইত্যাদি বিভিন্ন পণ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি কার্ড করার জন্য ২১০ টাকা করে ভর্তি ফি দাবি করে। এসময় আসামীরা প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার করে চাউল, আটা ও তেল ইত্যাদি বিভিন্ন পণ্য দিবে বলে প্রতিশ্রুত দেয়। ফলে গ্রামের গরিব লোকজন কম মূল্যে চাউল, আটা ও তেল ইত্যাদি খাদ্য পণ্য পাওয়ার আশায় আসামীদ্বয়ের কাছে ২১০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে থাকে। এভাবে ১৮ জন গ্রাহকের মাধ্যমে সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ও বুধহাটা এবং সদর উপজেলার ধুলিহর ও ব্রক্ষরাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫হাজার অসহায় দরিদ্র গ্রাহকের কাছ থেকে ৫১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
এদের মধ্যে মামলার বাদি কোমরপুর গ্রামের ইমান হোসেনের মাধ্যমে ১০ লক্ষ ৮৪ হাজার, গোবরদাড়ি গ্রামের কাবিল হোসেনের মাধ্যমে ২লক্ষ ৬০ হাজার, ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের হযরত আলীর মাধ্যমে ১ লক্ষ, দরবাস্তিয়া গ্রামের সোনাভান এর মাধ্যমে ১২ লক্ষ, বুধহাটা গ্রামরে সাজ্জাদ আলীর কাছ থেকে ৭ লক্ষ, চাঁদপুর গ্রামের ফতেমা খাতুনের কাছ থেকে ২ লক্ষ, একই গ্রামের মোক্তাজুল ইসলামের মাধ্যমে ২ লক্ষ, মমতাজ খাতুনের কাছ থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার, রেবেকা খাতুনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ২০ হাজার, চঞ্চলের কাছ থেকে ১ লক্ষ, দরবাস্তিয়া গ্রামের মাতিকুল এর মাধ্যমে ১ লক্ষ ১০ হাজার, বেউলা গ্রামের আক্তারুল ইসলামের মাধ্যমে ৫ লক্ষ, বাহাদুরপুর গ্রামের সনিয়া অক্তারের মাধ্যমে এক লক্ষ, জাফর আলীর মাধ্যমে, ২৫ হাজার, কোরপুর গ্রামের শহিদুলের মাধ্যমে ৭০ হাজার, লিফি খাতুনের মাধ্যমে ২৫ হাজার, বেউলা গ্রামের জেসমিনের কাছ থেকে ৭০ হাজার ও রূপার মাধ্যমে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মামলায় আরো বলা হয়, প্রথম এক দুই সপ্তাহ আসামীদ্বয় গ্রাহকদেরকে নিয়মিত ২/৩ কেজি করে আটা প্রদান করে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে আরো গ্রাহক সংখ্য বাড়াতে থাকে। একপর্যায় ১০০/১৫০ জন গ্রাহকের টাকার সমপরিমাণ আটা দিয়ে বাকিদের পণ্য দেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই এলাকায় আসামীদের প্রতি গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে। একপর্যায় তারা গ্রাহকদের প্রায় ৫১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাত করে নিজেরা আত্মগোপন করে। পওে গ্রাহকদের পক্ষে ইমান আলী বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদি ইমান হোসেন বলেন, থানায় মামলা দায়ের করায় দুই নং আসামী ফজিলা খাতুন বিভিন্ন লোকজন দিয়ে মামলা তুলে নিতে তাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির প্রতারনার শিকার গ্রাহকদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইতিমধ্যে মামলার প্রধান আসামী কার্তিক অধিকারী ওরফে শামিম ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেএ