প্রতিশ্রুতি রাখছেন না কুষ্টিয়ার চাল ব্যবসায়ীরা। খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সামনে কেজিতে দুই টাকা করে চালের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কুষ্টিয়ার বাজারে এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। পূর্বনির্ধারিত দামেই কুষ্টিয়ার খুচরা ও পাইকারি বাজারে সব ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আপাতত চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। এদিকে খাদ্যমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করলেও এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা দেখা যাচ্ছে না। চাল কিনতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছেন ক্রেতারা।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে কুষ্টিয়ার বড় বাজার এবং পৌর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বাজারে সব ধরনের চাল বিক্রি হচ্ছে। বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা যে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে রেখেছেন তাতে দেখা যায়, অটো রাইস মিলে ভাঙানো মিনিকেট চাল খাজানগর মিলগেট থেকে কেনা দেখানো হচ্ছে ৬৩ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকায়। সাধারণ মিনিকেট চাল ৬১ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে ৫২ টাকায়। অটো রাইস মিলে ভাঙানো কাজললতা চাল ৫৫ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়, কাজললতা সাধারণ চাল ৫০ টাকায় ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়।
এছাড়া অটো রাইস মিলে ভাঙানো বাসমতি চাল ৭৩ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়, সাধারণ বাসমতি চাল ৭০ টাকায় কিনে ৭২ টাকায় বিক্রি, কাটারিভোগ চাল ৬৮ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, নাজির শাইল চাল ৭২ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকায়, অটো রাইস মিলে ভাঙানো মোটা আটাশ চাল ৪৪ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৬ টাকায় এবং পোলাও চাল ৯৮ টাকায় কিনে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
এর আগে গত ২০ মার্চ অবৈধ মজুতদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকির বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ওই সময় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কাল থেকে চালের দাম বেড়ে যাওয়া তো দূরের কথা, যদি দাম না কমে আমাদের ভালো কথা বলা প্রশাসন অতো ভালো থাকবে না। খাদ্য নিয়ে কোনো অবস্থাতেই রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, যথেষ্ট লাভ করেছেন, আর নয়। রমজান উপলক্ষে লাভ নয় বরং ছাড় দিয়ে বিক্রি করাটাই উচিত।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত চার জেলার জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রত্যেকটা মিলের স্টক খতিয়ে দেখবেন। আজকেই ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাবেন। তদারকি ও মনিটরিং বাড়াতে হবে। মিল মালিকরা প্রতিদিন কার কাছে বিক্রি করছে, কতটুকু বিক্রি করছে তার হিসাব জেলা প্রশাসককে দিতে হবে। প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনই দিতে হবে।
বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রীর অনুরোধে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশীদ ওই দিন থেকেই মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা করে কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রীর কাছে দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়ার বাজারে এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চালকল মালিক সমিতির নেতারা কেজিপ্রতি দুই টাকা চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা তো কুষ্টিয়ার খাজানগর চালের মোকাম থেকে আগের রেটেই চাল কিনছি। তাহলে দাম কীভাবে কমবে?
এ বিষয়ে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর কাছে দাম কমানোর যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার অংশ হিসেবে ওই দিন থেকেই খাজানগর মিলগেটে চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ মিনিকেট চাল আগে ৫০ কেজি পাইকারি ৩১০০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। ওই দিন (২০ মার্চ) থেকে বস্তা প্রতি ১০০ টাকা কমিয়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ মিলগেটে প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৬০ টাকা কেজি। চালের দাম কমানোর ঘোষণার পর আমরা মিলগেটে দাম দুই টাকা কমিয়ে ৬০ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছি।
খাজানগর মিলগেটে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা কমলেও কুষ্টিয়ার বাজারে আগের মতো বেশি দামে কেন চাল বিক্রি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে চালকল মালিক সমিতির এই নেতা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরেই কুষ্টিয়ার চালের বাজারে প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। খুচরা বাজারে প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে চাল বিক্রি করে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রীর সামনে চালকল মালিক সমিতির নেতা ও ব্যবসায়ীরা চালের দাম প্রথমে এক টাকা পরবর্তীতে কেজি প্রতি দুই টাকা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও বাজারে কেন চালের দাম কমছে না এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এএ