শসার দাম লাখ টাকা! দাম শুনে চোখ কপালে উঠছে! ভাবছেন ৩০-৮০ টাকা কেজিতেই তো বাজারে শসা পাওয়া যায়, তাহলে এই শসার দাম কেন লাখ টাকা? এই শসা অবশ্য বাজারে বিক্রি হওয়া সাধারণ শসা নয়। এই শসার জন্ম কিংবা বেড়ে ওঠা কৃষকের জমিতেও নয়। এর জন্ম সমুদ্রের তলদেশে; যা এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী।
এই প্রাণীটিই ‘সি কিউকাম্বার’ নামে পরিচিত। যার বাংলা সামুদ্রিক শসা। বিশ্বের প্রায় সব সমুদ্রে এর দেখা মিললেও ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় সি কিউকাম্বার বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
বিশ্ববাজারে সি কিউকাম্বারের দারুণ চাহিদা! বিশেষ করে চীন, জাপান ও কোরিয়ায় এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সংগ্রহ করতে গিয়ে ডুবুরিদের প্রাণ হারানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। জানা যায়, যৌন শক্তিবর্ধক ওষুধ, ক্যানসারের চিকিৎসা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অবসাদ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি চিকিৎসায় এর ব্যবহার রয়েছে। তেল এবং ক্রিম বানাতেও এই সামুদ্রিক জীব ব্যবহার করা হয়। গয়না তৈরিতেও রয়েছে এর ব্যবহার। এ ছাড়াও দিক্ষণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে এই প্রাণীর দামি রেসিপি তৈরি হয়।
সি কিউকাম্বার একাইনোডার্ম পর্বের প্রাণী। আকৃতি ভেদে এরা লম্বা, চওড়া, চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। খুবই নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির প্রাণী। এরা শরীর ইচ্ছামতো সংকোচন ও প্রসারণ করতে পারে। শরীর নরম তুলতুলে। তবে এদের চোখ নেই। রয়েছে মুখ ও পায়ুপথ। এরা লম্বায় ৪-১২ ইঞ্চি। বেঁচে থাকে ৫-১০ বছর।
বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে প্রায় ১২০০ এর অধিক সি কিউকাম্বারের দেখা মিলেছে। সমুদ্রের নিচে বালিতে লুকিয়ে থাকা ছোট জীব এদের প্রধান খাদ্য। সি কিউকাম্বার প্রায় ৩ সপ্তাহ পরপর ডিম দেয়। সমুদ্রের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু পরিষ্কারক হিসেবে এদের বিশেষ পরিচয় রয়েছে। শত্রু প্রতিরোধে এরা এক ধরনের তরল ব্যবহার করে। এদের বিষ্ঠায় যে নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে তা প্রবাল প্রাচীরের জন্য খুব উপযোগী।
একসময় ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মাঝামাঝি মুন্নার খাঁড়িতে মূলত এই জীব বিপুল পরিমাণে পাওয়া যেতো। কিন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার কারণে এখান থেকে চোরাচালান হচ্ছে সি কিউকাম্বার। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে এই সামুদ্রিক শসা। যে কারণে বিগত কয়েক বছরে কয়েকগুণ বেড়েছে এর দাম। ১৯৮০ সালে এই শসার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫ হাজার টাকা। এখন দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তবে এর মধ্যে কয়েকটি বিশেষ প্রজাতি রয়েছে যার এক কেজির দাম দুই লাখ টাকারও বেশি।
খুলনা গেজেট/কেএ