দারুণ ব্যাটিংয়ে শক্ত ইনিংস গড়ে দিয়েছেন সাকিব-ইয়াসিররা। বল হাতে বাকি কাজ সেরেছেন তাসকিন, শরিফুল ও মিরাজরা। দুই বিভাগের দাপুটে দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৩৮ রানের জয়ে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয়ের ইতিহাস গড়েছে লাল-সবুজের দল।
আজ শুক্রবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে কোনো ফরম্যাটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। এর আগে কোনো ফরম্যাটেই সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। শেষ ২০১৭ সালেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশকে। পাঁচ বছর পর সফরে গিয়ে অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন দূর্গ জয় করতে পেরেছেন তামিম-সাকিবরা।
৩১৫ রান তাড়া করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার ভেঙে দিয়ে বল হাতে শুরুটা স্বপ্নের মতো করে বাংলাদেশ। তবে বড় লক্ষ্য নিয়েও মাঝপথে লড়াইটা কঠিন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের। ৩৬ রানে তিন উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা চতুর্থ জুটিতে পায় ৮৫ রানের শক্ত ইনিংস। তাঁদের ইনিংস মেরামত করতে গিয়ে বাংলাদেশকে বেশ ভোগান রাসি ফন ডার ডাসেন ও তেম্বা বাভুমা।
জমে যাওয়া এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান শরিফুল। তেম্বাকে ৩১ রানে বিদায় করেছেন তিনি। তেম্বার বিদায়ের পর রাসি ফন ডার ডাসেনকে আউট করেন তাসকিন। ৯৮ বলে ৮৬ রান করা ফন ডার ডাসেনকে দারুণ ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন ইয়াসির।
তবে দুজন ফিরলেও বাংলাদেশের সমীকরণ কঠিন করে তোলে দক্ষিণ আফ্রিকার মিডল অর্ডার। ফের বাংলাদেশকে ভোগান ডেভিড মিলার। ৭৯ রানে তাঁর ঝড় থামান মিরাজ। মিলার ফিরলে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন হয়নি। ৩১৫ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার আগেই ২৭৬ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামায় বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩১৪ রান তোলে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন সাকিব আল হাসান।
সেঞ্চুরিয়নে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে রান তুলতে বেশ ভোগে বাংলাদেশ। কাগিসো রাবাদা-এনগিডিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের জন্য বেশ লড়াই করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
দুজনে মিলে উইকেটে টিকে থাকেন লম্বা সময়। ওপেনিং জুটিতে দুজন মিলে গড়েন ৯৫ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যেটা ওপেনিং জুটিতে তো বটেই যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড।
অবশেষে ২২তম ওভারেই জুটি ভাঙেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। প্রোটিয়া বোলারের অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে সুইং করে আসা বল লেগে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু পারেননি, উল্টো পড়েন এলবির ফাঁদে। যদিও রিভিউ নিয়েছিলেন তামিম, কিন্তু তাতে রক্ষা পাননি। ফেরার আগে ৬৭ বলে ৪১ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
তামিম ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকলেন না লিটন দাসও। পরের ওভারেই হাফসেঞ্চুরি করে তিনিও ফেরেন সাজঘরে। তাঁকে বিদায় করেন কেশব মাহারাজ। তামিমের সমান ৬৭ বল খেলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫০ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
দুই ওপেনার ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব ও মুশফিক। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মুশফিককে ফিরিয়ে ২০ রানে এই জুটি ভাঙেন কেশব। ১২ বলে ৯ রান করা মুশফিককে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান কেশব।
মুশফিক ফিরলেও টিকে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ইয়াসির আলী রাব্বিকে নিয়ে ১১৫ রানের চমৎকার জুটি উপহার দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এই জুটি গড়ার পথেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের পঞ্চাশতম হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন সাকিব। ফেলুকওয়ায়োর বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পৌঁছে যান পঞ্চাশের ঘরে। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের ৫০তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানে ভাঙে সাকিবের প্রতিরোধ। এনগিডির এলবির ফাঁদে পড়ে ফেরেন সাকিব। ৬৪ বলে সাত বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় সাজানো ছিল সাকিবের ইনিংসটি।
সাকিবের সঙ্গে থাকা রাব্বিও দারুণ খেলেন। তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ঠিক ৫০ ছুয়েই আউট হন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। সাকিব-ইয়াসির ফিরলে শেষ দিকের ব্যাটারের ওপর চড়ে ৩১৪ রানে সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯ , তাসকিন ৭; কেশব ১০-০-৫৬-২, রাবাদা ১০-০-৫৭-১, এনগিডি ১০-১-৭৫-১, ফেলুকওয়ায়ো ১০-১-৬৩-১, মার্কো ১০-১-৫৭-২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬/১০ (বাভুমা ৩১, মালান ৪, মারক্রাম ০, মিলার ৭৯, এনগিডি ১৫, আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো ২, রাবাদা ১, কেশব ২৩, ফন ডার ডাসেন ৮৬, কাইল ভেরেইনা ২১; তাসকিন ১০-১-৩৬-৩, সাকিব ১০-০-৫৪-০, শরিফুল , মাহমুদউল্লাহ ১.৫-০-২৪-১, মুস্তাফিজুর ১০-০-৫০-০, মিরাজ ৯-০-৬১-১)।
ফল : ৩৮ রানে জয়ী বাংলাদেশ।