খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৩
  কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
  আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ফখরুল-রিজভী-আমির খসরু
  ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণু হত্যা : একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

মানবতাবিরোধী অপরাধে আশাশুনির আবুল হাশেম ও মুজিবর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক,সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভুক্ত দুই রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। রোববার (১৩ মার্চ) দুপুর একটার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ তাদেরকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাপড়া ও পাইথলী খামার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের আবু তাহের সরদারের ছেলে বুধহাটা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম সরদার ও একই গ্রামের সদরউদ্দিন সরদারের ছেলে মুজিবর রহমান সরদার ওরফে ধনু।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের পাশে চাপড়া লজের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর গুলিবর্ষণ করে পাক হানাদার ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা। এ সময় রিক্সা চালক আব্দুর রাজ্জাক গুলিতে নিহত হয়ে প্রথম শহীদ হন। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন আশাশুনি সদরের চাপড়া গ্রামের সদরউদ্দিন সরদারের ছেলে রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত হোসেন, তার ভাই মুজিবর রহমান, আবুল হাশেমের ভাই বাকী বিলল্লাহসহ কয়েকজন। এর কয়েকদিন পর মুজিবর সরদার, লিয়াকত সরদার ও আবুল হাশেম এর নেতৃত্বে আশাশুনির চাপড়ার আনছারউদ্দিন, আশাশুনি গ্রামের গোরা চাঁদ ঠাকুর, শরাফপুরের লোকনাথ দাস, তারাপদ দাস, কেষ্টপদ দাসসহ কয়েকজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুল্লার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। লুটপাট চালানো হয় ওই সব বাড়িতে। এ ঘটনায় আশাশুনি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন সানা বাদি হয়ে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার হিসেবে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত সরদার, তার ভাই মুজিবর সরদার ও আবুল হাশেম সরদারকে আসামী করা হয়। তৎকালিন জেলা ও দায়রা জজ মামলাটি ঢাকা আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন সহকারি পুলিশ সুপার এমএ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের ২৬ মে ঘটনাস্থল ঘুরে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সাক্ষীদের জবানবন্দি নেন এমএ রাজ্জাক। সাক্ষী দেওয়ার অপরাধে বুধহাটা দক্ষিণ পাড়ার আকবর আলীকে একটি চায়ের দোকান থেকে তুলে এনে লোহার রড দিয়ে হাত ও পা ভেঙ্গে দেন রাজাকার আবুল হাশেম সরদার। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এমএ রাজ্জাক অবসরে যান।

পরবর্তীতে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন সহকারি পুলিশ সুপার আমিনুর রশীদ। তিনি আন্তজার্তিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল সাইদুর রহমান ও সহকারি এটর্ণি জেনারেল ব্যারিষ্টার রাজিয়া সুলতানা চমন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। একপর্য়ায়ে বাদির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ও রাজাকার কমান্ডার লিয়াকত সরদার দু’ মাস আগে মারা যাওয়ায় তদন্তকারি কর্মকর্তা আবুল হাশেম সরদার ও মুজিবর সরদারের বিররুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আন্তজার্তিক আপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাড. গোলাপ আরিফ টিপু। রোববার ওই প্রতিবেদন শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষ দু’ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইলে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করেন। মানবতাবিরোধী অপারাধে (আইসডি বিডি মিস কেস৩/২২ মামলায়) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত বিশেষ ম্যাসেজ সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মহোদয়কে পাঠানো হয়।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। রোববার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদেশ পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মজিবর রহমান ধনুকে আশাশুনির পাইথালী এলাকার হাসেম রাজাকারের বাগানবাড়ি থেকে ও আবুল হোসেনকে চাঁপড়ার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আলাউদ্দীন সানা জানান, আশাশুনি গ্রামের গোরা ঠাকুরকে হত্যা ও তার মেয়েকে ধর্ষণ করে গুম করার অভিযোগ রয়েছে মজিবর রহমান ধনু, আবুল হোসেন ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে হত্যাকারী লিয়াকত কমান্ডারের বিরুদ্ধে। এছাড়া চাপড়ার আনিসুর রহমান, শরাফপুর গ্রামের মেঘনাথ দাস, তারাপদ দাস ও কেষ্টপদ দাসকে একাত্তর সালে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!