সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে ভ‚য়া বিল ভাওচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলনসহ নানান অভিযোগ উঠেছে পাঁচ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করেছেন পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নাগরিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে সত্যতা যাচাই করে পাঁচজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়েছে। শিঘ্রই এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসান পৌরসভার নানা প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়ম উল্লেখ্য গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনা-বেক্ষনের কর্মসূচি প্রকল্পে কোন কাজ না করেই ভ‚য়া টি.আর বিল ভাওচার দাখিল করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে নিজ নামে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলণ করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া সুলতানপুর শাহী মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, দক্ষিণ সুলতানপুর বাইতুল্লাহ জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর আব্দুর রশিদ এর বাড়ীর সামনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কার এবং পার্শ্ববর্তী দরিদ্রদের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর কাজীপাড়া জামে মসজিদ সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর বড় জামে মসজিদ এর সোলার প্যানেল স্থাপন, সুলতানপুর জামে মসজিদ এর সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর সাহাপাড়া শাহীন ও আহেদার মিস্ত্রীর বাড়ির সামনে তিন রাস্তার মুখে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর ক্লাবের রাস্তার ধারে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে সোলার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নগদ টাকা নিজ নামে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ঠিকাদারদের জিম্মি করে সমস্যার সৃষ্টি করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা আদায় করে পৌরসভার সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগসহ রাস্তা সংস্কার কাজে প্রভাব বিস্তার, টেন্ডার ও ইজারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা এবং গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপার বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। তারমধ্যে প্রধান ডাকঘরের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কার, মুন্সিপাড়ায় বজলুর রহমানের বাড়ির সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, মুন্সিপাড়ায় মেহেরুন্নেছার বাড়ির সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নগদ টাকা নিজ নামে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করার অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া আইন বহির্ভূতভাবে নিজ নামে ৬টি এবং আত্মীয় স্বজনদের নামে বেনামে একাধিক দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। নিজ ভাগ্নে তুহিনকে দিয়ে জিলানী এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারদের সহিত যুক্ত হয়ে পৌরসভার ঠিকাদারের কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। পৌরসভার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজটি ঐ প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত হয়। এতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির প্রামাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌর সভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম বাবুর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। তারমধ্যে রাধানগর খাল সংলগ্ন বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, কামালনগর দারুসসালাম জামে মসজিদের সোলার হোম সিস্টে প্রকল্প, কামালনগর দক্ষিণ পাড়ার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, কামালনগর আহলে হাদিস মসজিদের পিছনের রাস্তার সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, কামালনগর গোরস্থানের সামনে হতে বৌ বাজার পর্যন্ত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন সংস্কার প্রকল্প এবং কামালনগর হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংস্কারসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌর সভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর অনিমা রানী মÐলের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। তারমধ্যে সুলতানপুর বড় বাজার জামিয়া কোরআনিয়া মাদ্রাসার সংস্কার ও সোলার প্যানেল স্থাপন, টাবরারডাঙ্গী টি.কে বাইতুল্লা জামে মসজিদের সোলার স্থাপন, ইসলামপুর-৩ এ রাস্তায় সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, টাবরাডাঙ্গী কালি মন্দিরে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, সুলতানপুর পোলস্টার স্কুলের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শফিক-উদ-দৌলা সাগরের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। তারমধ্যে পৌরসভার প্রাণসায়ের খালের পশ্চিম পার্শ্বের বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার, চৌরঙ্গী মোড়ে উত্তর পার্শ্বে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন সংস্কার ও রাস্তা সংস্কার প্রকল্প, খুলনা রোডের পশ্চিম এলাকায় মাস্টারের বাড়ির সামনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প, রসুলপুর হায়দারের বাড়ির সামনে রাস্তায় সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্প, মেহেদীবাগ মসজিদের সামনে সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পসহ গ্রাম্য শালিসে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানী ও নগদ অর্থ আত্মসাৎ’র অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি উল্লেখিত পাঁচজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ সরেজমিনে সত্যতা যাচাই পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গত ২০ ফেব্রæয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রেরণ করেছেন। তিনি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এর তদন্তপূর্বক জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।