অমর একুশে বইমেলার সময়সীমা ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে বইমেলা নিয়ে আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম যে, আদৌ বইমেলা আমরা শুরু করতে পারব কি-না। এক সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বইমেলা স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত নির্দেশনা দিলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু করতে। উদ্বোধনের পর জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বিক্রেতারা এবং বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সময় বৃদ্ধি করা যায় কি-না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেটি আবেদন করেন।’
‘আমরা তখনই বলেছিলাম যে, সংক্রমণ যদি কমতে থাকে তাহলে বইমেলার সময় বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছিলেন, ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে কোভিড পরিস্থিতির ওপর। আজকে সুসংবাদ হলো, সকালে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন এবং ১৭ মার্চ পর্যন্ত বইমেলা বৃদ্ধি করা হয়েছে’, বলেন তিনি।
‘জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ, এ পর্যন্তই মেলাটির সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে’, জানান তিনি।
কে এম খালিদ বলেন, ‘এবার বই মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে। আমরাও চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা পরিচালনা করতে। মাস্ক পরার বিষয়ে আমরা কড়াকড়ি আরোপ করেছি।’
অনেকে মাস্ক পরতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢোকার সময় হয়তো পরেন কিন্তু ভেতরে গিয়ে খুলে ফেলেন। বই মেলায় যারা যান, তারা কিন্তু সজ্জন ব্যক্তি। তাই অনুরোধ করব, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরুর রীতি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হয়। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চালু থাকে। রাত ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চালু থাকে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায় বইমেলা চলছে। মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশপথ ও ৩টি বাহির পথ জনসাধারণের প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বরাবরের মতো বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভেলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের জন্য ১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার শিশুচত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে নেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশু প্রহর’ না থাকলেও পরে তা যোগ করা হয়।
অন্যদিকে, লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোট ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শতকরা ২৫ শতাংশে বই বিক্রি করবে।
বইমেলা আরো প্রাণবন্ত ও জমজমাট করতে এবং লেখকদের উৎসাহ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে। অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদীতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্রের উত্তরপাশে।
খুলনা গেজেট/এনএম