খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে ফার্মগেটে বণিজ্যিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট কাজ করছে
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

বহিরাগতদের দখলে সরকারী পিসি কলেজ, অধ্যক্ষ নিরাপত্তাহীনতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী পিসি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত অছাত্রদের আধিপত্য রয়েছে। নবীন বরণ, বিদায় অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস, রাজনৈতিক সভা সমাবেশে সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে তাদের। ভর্তি, অর্নাস ফরমফিলাপ, টার্ম পেপারের মত একাডেমিক কার্যক্রমও অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কলেজের দাপ্তরিক কাজেও হস্তক্ষেপ করেন তারা। বহিরাগতদের এসব অন্যায় এতদিন মুখবুঝে সহ্য করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।

তবে সম্প্রতি কলেজ অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করে অধ্যক্ষের গাড়ি(মাইক্রোবাস) নিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। এনিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই অবস্থায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের বের করে সুষ্ঠ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা।

সরকারী পিসি কলেজ শিক্ষক কর্মকর্তা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গেল ৩০ জানুয়ারি ছাত্র নামধারী কিছু বহিরাগত কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আসাদুল আলম খানকে জনসম্মুখে হেনস্তা করে। পরবর্তীতে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের ব্যবহৃত সরকারী গাড়ি নিয়ে কলেজ ছাত্র সংসদের সামনে আটকে রাখে তারা। এই ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি কলেজ শিক্ষক কর্মকর্তা পরিষদের পক্ষ থেকে জরুরী সভা ডাকা হয়। ওই সভায় কলেজে সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি সরকারি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা ফেব্রুয়ারি কলেজে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে ছাত্র নামধারী বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপ শিরোনামে জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে একটি অবগতি পত্র প্রেরণ করা হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আসাদুল আলম খান স্বাক্ষরিত অবগতি পত্রে বহিরাগতদের কারণে কলেজে সৃষ্ট নানা সমস্যা উল্লেখ পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

অবগতিপত্রে আরও বলা হয়, ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাসসমূহে ছাত্র নামধারী বহিরাগত অবস্থান করায় পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে তারা। তারা টার্ম পেপার প্রস্তুত, ভর্তি ও পরীক্ষার আবেদনপত্র উত্তোলন বাবদ অবৈধ টাকা আদায় করছে। বহিরাগতদের কারণে ক্যাম্পাস এখন মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।

অধ্যক্ষের গাড়ি জোরপূর্বক নিয়ে ছাত্র সংসদের সামনে রেখেছে। তাদের আচরণে অধ্যক্ষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই অবস্থায় উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিক্ষক পরিষদ।শুধু শিক্ষক পরিষদ নয়, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝেও বহিরাগতদের এমন আচরণে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবার ছেড়ে এখানে এসছি পড়াশুনা করতে, বড় ভাইদের হুকুম তামিল করতে হয়। যেকোন সময় প্রোগ্রামে একধরণের জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের। কলেজের ক্লাস, টিউশনি বা যত জরুরী কাজ থাকুকনা কেন, আমাদের যেতে হয় তাদের ডাকে। না গেলে নানা ধরণের ঝামেলা করেন। পিসি কলেজে পড়েই বিপদে পড়েছি আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্নাতক (সন্মান) চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার সময় ছাত্র সংসদ থেকে ফর্ম তুলতে হয়। বাইরে থেকে ফর্ম পূরন করে আনলে সেই ফর্ম গ্রহনযোগ্য হয় না। ফর্ম পূরণের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। ২০ টাকার ফর্ম ১০০ টাকা দিয়ে পূরণ করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, কলেজ ক্যাম্পাস থাকে বহিরাগতদের দখলে। কলেজ চলাকালে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ভীতীর সৃষ্টি করে তারা। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বসে মাদকের আসর। কলেজে কোনো স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ নেই।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আসাদুল আলম খান বলেন, ২০২১ সালের ২ অক্টোবর যোগদানের পর থেকে লক্ষ্য করি, কলেজের দাপ্তরিক, একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ রয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাস, ছাত্রাবাস-ছাত্রীনিবাসে বহিরাগতরা অবস্থান করছেন। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যবহারিক খাতা বিক্রয়, টার্ম পেপার প্রস্তুত ও ভর্তি ও পরীক্ষার আবেদনপত্র উত্তোলন বাবদ অবৈধ টাকা আদায় করছে। তাদের কারণে ক্যাম্পাস এখন মাদকের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। বহিরাগতদের অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে হেনস্থা ও অপমান করে। ছাত্র-ছাত্রী নামধারী কিছু বহিরাগতরা বাগেরহাট পুরাতন কোর্ট চত্বর এলাকা থেকে আমার অফিসের গাড়ি জোরপূর্বক নিয়ে যায়। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, কলেজের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে একটি অবগতি পত্র পেয়েছি। কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চাইলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!