২০১০ সালে জুন মাসের ১৬ তারিখ। সকাল আটটার দিকে সোনাডঙ্গা থানার আরমবাগ এলাকার আব্দুল কুদ্দুদের বাড়িতে হঠাৎ গ্যাঙ্গনির শব্দ। আশপাশের মানুষ সেই শব্দে তার বাড়ি গিয়ে ভিড় জমায়। দেখতে পায় তাদের গৃহপরিচারিকার গায়ে আগুন। আগুনের লেলিহান শিখায় কিশোরী হালিমার সমস্ত শরীর পুড়ে যায়।। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় গৃহপরিচারিকার। মৃত্যুর আগে জবানবন্দি দেয় হালিমা। আজ সোনাডাঙ্গা থানার আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে আসামি শেখ খুরশিদুল আলম ওরফে রুবেলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ৪(১) ও ৯(১) উভয় ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম করাদন্ড ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে উভয় ধারায় তাকে ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত -৩ এর বিচারক মাহমুদা খাতুন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক ছিলেন। তবে মামলার অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালতের সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে ফুলতলা উপজেলার দামোদার গ্রামের দক্ষিণপাড়ার কাশেম ঢালীর কন্যা হালিমা খাতুন সোনাডাঙ্গার আরামবাগ আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। তখন থেকে হালিমার ওপরে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে গৃহকর্তার ছেলে রুবেলের। প্রায়ই তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হতো। কিন্তু হালিমা তাতেও রাজি হয়নি। অতপর বিয়ের প্রলোভনে তারা উভয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একসময়ে অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে হালিমা খাতুন। পরে রুবেল বিষয়টি আচ করতে পেরে এড়িয়ে চলতে থাকে হালিমাকে। এক পর্যায়ে ভাবির প্ররেচনায় হালিমার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করা হয়।
পরে রুবেলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় হালিমা। ঘটনার দিন আসামির ভাবি হোসেনে আরা রোজি কর্মক্ষেত্রে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর ভিকটিম বিয়ের জন্য রুবেলকে আবারও চাপ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় রুবেল। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে হালিমা। তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর পূর্বে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেয় সে। সেখানে সব ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে হালিমা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার এসআই টিপু লাল দাস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই বছরের ৪ অক্টোবর চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, শেখ খুরশিদ আলম রুবেল, ভাবি হোসনে আরা রোজি, নার্স মিনা বেগম ও বিউটি বেগম। তদন্ত কর্মকর্তা তার তদন্তে উল্লেখ করেছেন এরা সকলে এ ঘটনা জানতেন। তারা চেষ্টা করলে মেয়েটিকে অল্প বয়সে মরতে হতো না।