১৫ দিনের মধ্যে খুলনা জেলা ও নগর বিএনপির ৫১ সদস্য করে দু’টি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত নগর কমিটির আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা । এছাড়া দলের কর্মসূচিতে ‘সক্রিয় না হলে’ ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে থানা কমিটিও।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড আগামীকাল শনিবার খুলনা জেলা ও নগর কমিটির ছয় নেতাকে ঢাকায় ডেকেছেন। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা এবং দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দিতেই মূলতঃ নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কাল সকালে খুলনা ত্যাগ করবেন।
১৫ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী টেলিফোনে স্থানীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি হাইকমান্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মূলতঃ গণতান্ত্রিক আন্দোলন বেগবান করতে এবং বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলন গড়ে তোলার দৃঢ়তার কথা আলোচ্যসূচীতে প্রাধান্য পাবে। ২২ ডিসেম্বর যশোরে বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ সফল ও জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নগর বিএনপি’র আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা খুলনা গেজেটকে জানিয়েছেন, হাইকমান্ডের পরামর্শ পাওয়ার পর স্থানীয় থানা কমিটিগুলো কর্মসূচীতে অংশ না নিলে এসব কমিটি বাতিল হবে। সেখানে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় চিঠির আলোকে তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে জেলা ও নগর শাখায় ৫১ সদস্য করে দু’টি কমিটি গঠন করা হবে। যশোরের সমাবেশে দলের স্থানীয় পর্যায়ের সবচেয়ে বেশী জনবল পাঠানো হবে।
নয়া কমিটি গঠনের পর গত ১১ ডিসেম্বর জেলা ও নগর শাখার কার্যনির্বাহী কমিটি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস পালন করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরীতে শোভাযাত্রা বের হয়।
৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র ঘোষিত নগর কমিটির আহবায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা, যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। জেলা শাখার আহবায়ক আমীর এজাজ খান, যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু ও সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী।
এদিকে খুলনায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ এখন তুঙ্গে। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরাও। মহান বিজয় দিবসেও দু’টি পক্ষ নগরীতে পৃথক মিছিল করে। যা সাধারণ নেতাকর্মীরা ভাল দৃষ্টিতে দেখছেন না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মতভেদ ভুলে সকলকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
নয় ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি’র আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এতদিন খুলনায় বিএনপি’র রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কানাঘুষি থাকলেও নতুন কমিটি ঘোষণার পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এরপর পদ পদবীধারী নেতাকর্মীরাও কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নগরীর থানা কমিটিগুলোর অধিকাংশ নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে থাকায় ঐ কমিটিগুলো শিগগিরই ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
কমিটি ঘোষণার দু’দিন পর সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার সমর্থকদের নিয়ে বিএনপি খুলনার ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। যা নিয়ে কেন্দ্রিয় নেতারা তার ওপর নাখোশ হন। সংবাদ সম্মেলনের কয়েকটি বক্তব্যের জন্য তাকে শোকজ পর্যন্ত করা হয়। ওই দিন দলের অপর গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশও করে।
নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র এক নেতা দলের বিভক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনার রাজনৈতিক অঙ্গনে মঞ্জুর কোন বিকল্প নেই। যারা খুলনা বিএনপি রাজনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সম্পর্কে সকলে অবগত আছেন। ক্ষমতার বাইরে গত দেড় দশক খুলনায় বিএনপি’র রাজনীতির হাল ধরে রেখেছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। আপদে বিপদে তাকে কাছে পাওয়া গেছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পূর্বের পদ ফিরিয়ে না দিলে ব্যক্তিগতভাবে তিনি একা নন, অনেকেই বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
২৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র আরেক নেতা জানান, বর্তমান কমিটিতে যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে তাদের দিয়ে মাঠ রাজনীতি করা সম্ভব নয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে সকলকে একসাথে কাজ করার জন্য তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আহবান জানান। নতুবা দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন সাবেক কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হক শাওন জানান, দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সারাদেশে নগর ও জেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীতে যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনের সফলতা আসবে তাদেরই নির্বাচিত করা হবে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র বিরোধীতার কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি যেটা করছেন তা যুক্তিহীন ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি। বিএনপি কোন একক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না তা বৃহস্পতিবারের শোভাযাত্রা প্রমাণ করেছে।
নগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল ইসলাম মনা খুলনা গেজেটকে আরও জানান, নতুন কমিটি ঘোষণার পর নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে তিনি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাড়িতে গিয়েছেন। বিজয় দিবসের আলোচনা ও র্যালীর জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নেননি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি যে নির্দেশনা দিবেন সেটি আমরা অনুসরণ করব।
খৃুলনা গেজেট/ টি আই