টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন থেকে ‘হাফ পাস’ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মালিকপক্ষ শুধুমাত্র ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না বলে তারা জানিয়েছেন। মালিকপক্ষের এই শর্ত আমরা মানি না। আমরা চাই শুধুমাত্র ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এই নিয়ম থাকবে। সারা দেশে শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে হাফ পাস ভাড়া দিয়ে চলাচল করবে। নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি এটিও আমাদের একটি দাবি। এই দাবি বাস্তবায়ন না হলেও আমরা রাস্তা ছাড়ব না।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে এসব দাবি জানাচ্ছেন।
রামপুরা ব্রিজ এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের উপর দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছেন। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন পরিবহনের বাস রাস্তার দুই পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এর ফলে ওই সড়কে আজও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে আশপাশের সড়কে।
অন্যদিকে মঙ্গলবারের মতো আজও শিক্ষার্থীরা জরুরি সেবার পরিবহনকে প্রমাণসাপেক্ষে ছেড়ে দিচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন পরিবহনের লাইসেন্স ও কাগজপত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীরা সেগুলো দেখছেন। যাদের কাছে এসব কাগজপত্র নেই এসব গাড়ির চালকদের নামিয়ে নিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা এবং পুলিশের কাছে দাবি জানাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।
এদিকে রামপুরা থেকে শিক্ষার্থীরা ১১টি নতুন দাবি জানিয়েছেন
১. সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাঈনউদ্দিনের হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
২. সারা দেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফপাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফপাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৩. গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালককে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুয়ায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে।
৭. শ্রমিকদের নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তি ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকেট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারিত করে দিতে হবে।
১১. মাদকাসক্তি নিরসনে সমাজজুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্টের ও কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই