সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখা। শনিবার (৬ নভেম্বর) বিকাল চারটায় সাতক্ষীরা শহরের হোসেন মার্কেটের সামনে শহীদ নাজমুল সরনীতে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি কমঃ মহিবুল্লাহ মোড়ল এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য তালা- কলারোয়া আসনের সাংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য স্বপন কুমার শীল, প্রভাষক মঈনুল হাসান, কমঃ অজিত কুমার রাজবংশী, প্রকৌশলী আবেদুর রহমান, জেলা কমিটির সদস্য আব্দুল জলিল মোড়ল, প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মাষ্টার আব্দুর রউফ, তালা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিরন্ময় মণ্ডল, জেলা যুব মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মফিজুল হক জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ১২ অক্টোবর দুর্গাপুজা চলাকালিন কুমিল্লার নান্নুর দীঘির পাড় মন্দিরের দুর্গা প্রতিমার পাশে থাকা মাটির তৈরি হনুমানের উরুর উপরে পরিকল্পিতভাবে রেখে দেওয়া একটি কোরআনকে নিয়ে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সিলেট, ফেনী, বগুড়াসহ দেশের ২১টি জেলায় যেভাবে ইস্কন মন্দিরসহ ২০০টি মন্দির, প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে তা কোন স্বাধীন দেশের সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। এসব ঘটনায় যতন সাহাসহ পাঁচজন মারা গেছে। রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুরের ৩৫টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৬৮টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন দেশের।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের দাবি অনুযায়ি এই সংসদ অধিবেশনে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দাবি মেনে অবিলম্বে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে আসতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর ব্যত্তয় হলে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
বক্তারা আরো বলেন, ২০১২ সালে কালীগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদাহে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের ঘরবাড়ি, মন্দির ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হলেও গত ৮ বছরে এর বিচার হয়নি। এ ছাড়া কক্সবাজারের রামু, বৌদ্ধ বিহার, গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, যশোরের মনিরামপুর, খুলনার রুপসা থানার শিয়ালীসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন এদেশের সংখ্যালঘুদের অস্তিস্তরক্ষার পক্ষে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার জের ধরে ভারতের ত্রিপুরায় মসজিদে ও মুসলিমদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যাবে না। বিশ্বব্যাপি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মানববন্ধন শেষে একটি র্যালি সাতক্ষীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু।
খুলনা গেজেট/ টি আই