কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েকে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদস্ত কমিটি গঠন করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। রবিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (উপ সচিব) শ্রাবন্তী রায়কে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন চকরিয়ার এসিল্যান্ড ও হারবাং ইউনিয়নের একজন ট্যাগ অফিসার। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এ ঘটনায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব একটি সুয়োমোটো আদেশ দিয়েছেন চকরিয়ার এএসপি সার্কেল কাজী মো. মতিউল ইসলামকে। তাকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে করতে বলা হয়েছে।
এর আগে কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগে বৃদ্ধা মা ও তরুণী মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে এলাকা ঘোরানো এবং মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেন বলে জানান।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত শুক্রবারের (২১ আগস্ট) ওই ঘটনাটির ভিডিও শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলে গণমাধ্যমে খবর আসে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাদের মারধর করেন। মরধরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রকাশ্যে রশিতে বেঁধে পেটাতে পেটাতে গ্রামে ঘোরানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে আবার চেয়ারাম্যানের মারধর করার বিষয়টি ন্যক্কারজনক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অনেকেই মনে করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এ ঘটনাকে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চেয়ারম্যানের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা যায়নি।
একজন জনপ্রতিনিধির এমন মারধরের বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রোববার বিকেলে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ’
উল্লেখ্য কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে একই পরিবারের চারজনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের পর পুলিশে দেয় স্থানীয় জনতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। গত শুক্রবার চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ পায় ও ভাইরাল হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় মাহমুদুল হক বাদী হয়ে গরু চুরির অভিযোগে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার, তার মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার, ছেলে আরমান ও পেকুয়া উপজেলার ছুট্টু নামের একজনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।