‘পাঁচটি টাকা দাও না ওভাই পাঁচটি টাকা দাও না। ১শ টাকা ৫শ টাকা হাজার টাকা চাই না। এ দুনিয়ার সবারই’তো আছে ক্ষুদার জ্বালা, আমায় একটু দয়া করো ওবাপ পয়সা ওয়ালা। এই দয়াতে বেঁচে যাবে আমার দুটি সোনা। পাঁচটি টাকা দাও না ওভাই পাঁচটি টাকা দাও না। ১শ টাকা ৫শ টাকা হাজার টাকা চাই না।’
এভাবেই দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পথে পথে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্ধ বাউল। কেঁদে কেঁদে গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করেই বেঁচে আছে পরিবারের তিন অন্ধ ভাইসহ ৮ জনের একটি বড় পরিবার।’
বলছিলাম ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের পরিমল দাসের পুত্র অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাসের কথা। জন্ম সূত্রে তিনি অন্ধ। সংসারের ঘানি টানতে টানতে পার হয়ে গেছে জীবনের ৪০ বছর। তার ছোট দুই ভাই দিপংঙ্কর দাস (২০) ও শুভংঙ্কর দাস (১৪) তারাও জন্ম সূত্রে অন্ধ। তিন অন্ধ ভাইয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বৃদ্ধ বাবা। বাবার উপার্জনে তাদের সংসার চলে না। অন্য কোন কাজ করার সক্ষমতা না থাকায় ১০ বছর বয়স থেকে গান গেয়ে টাকা উপার্জনের পথ বেছে নেন শংকর দাস। এরপর একুশ বছর বয়সে বিবাহের পর পল্লব দাস(৬) ও পার্থ দাস (৪) নামে তার ঘর আলোকিত করে দুই ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে।
অভাব অনটনের কারণে ৩০ বছর ধরে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে উপজেলার চুকনগর, আঁঠারমাইর, কাঁঠালতলা ও খর্ণিয়া বাজার সহ কয়েকটি বাজারের রাস্তার উপর বসে গান গেয়ে পথচারীদের মন জয় করার চেষ্টা করেন শংকর। গান শুনে অনেকে খুশি হয়ে তাকে ১/২ টাকা করে যা দেয়। তাতে প্রতিদিন প্রায় ১শ থেকে ২শ টাকা তার উপার্জন হয়।
সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী, ২পুত্র, পিতামাতা ও অন্ধ ২ভাই মোট ৮ জনের সংসার কোনক্রমেই চলে। কিন্ত বর্তমানে তিনি এই অন্ধ চোখ নিয়ে গান গাইতে গাইতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তারপরও অভাবের এই সংসারে একদিন পথে বসে গান না গাইলে পুরো পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি আজও পথচারীদের মনোরঞ্জনের জন্য গান গেয়ে চলেছেন।
শংকর দাস দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘আজ তিনি বড়ই ক্লান্ত। অসুস্থতাসহ নানা কারণে আর হয়তো বেশিদিন তিনি গান গাইতে পারবেন না। তখন তার পরিবারের কি অবস্থা হবে কে নিবে তাদের দায়িত্ব। এই কথা বলতে বলতে তিনি কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন।’
স্থানীয় আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ প্রতাপ কুমার রায় বলেন, ‘অন্ধ বাউল শিল্পী শংকর দাসের ঘর বাড়িরও বেহাল দশা। তাই আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেষ্টায় কাঁঠালতলা আশ্রয়ন প্রকল্পে তার পরিবার নিয়ে থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তবে তার জন্য আরও কিছু আমাদের করা প্রয়োজন।’
খুলনা গেজেট/ এস আই