সাতক্ষীরায় শুরুতেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে সাধারণ মানুষের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। নানা সংশয়ে টিকা কেন্দ্র গুলোতে মানুষের উপস্থিতি তেমন একট দেখা যেত না। কিন্তু পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ন উল্টো। যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও এখন টিকা গ্রহণে বেশ অগ্রহী। প্রখর রোদ্র্রে কখনো বা বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে টিকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছেন সকল বয়সের নারী ও পুরুষের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে টিকা কেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ লাইন। টিকা গ্রহীতাদের ভীড় এড়াতে নারী ও পুরুষের আলাদা আলাদা টিকা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দু’টি কেন্দ্রেই প্রখর রোদ্রের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন টিকা নিতে ইচ্ছুক নারী-পুরুষ। ভীড় এড়াতে অনেকে খুব ভোরে এসে টিকা কেন্দ্রে লাইনে দাড়িয়েছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে লাইন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। তবে দু’টি কেন্দ্রেই শৃঙ্খলা বজায় রেখেই মানুষ টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের গাভা গ্রামের সুলেখা দাসী (৭৫) জানান, প্রথমে করোনার টিকার কথা শুনে ভয় হতো। যেকারনে আগে টিকা দিতে পারিনি। প্রতিবেশীদের কাছে শুনে বুঝে আজ এসেছি। টিকা কেন্দ্রে খুব ভীড় হয় জানতে পেরে নাতি ছেলেকে নিয়ে খুব ভোরে ভ্যানে চড়ে হাসপাতালে এসে দেখি আমাদের আগেও অনেকে লাইনে দাড়িয়ে আছে। টিকা দিয়েছি কোন সমস্যা হয়নি। যারা টিকা দিচ্ছেন তারাও ভালভাবে দিচ্ছে।
সীমান্তবর্তী কুশখালী এলাকার আব্দুল জলিল জানান, নানা কারণে আগে টিকা দেয়া হয়ে উঠেনি। সবাই দিচ্ছে জানতে পেরে নিজেও সিদ্ধান্ত নেই। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সকালে টিকা দিতে হাসপাতালে এসে দেখি প্রচন্ড ভীড়। সকাল ১০টা থেকে এখনো লাইনে দাড়িয়ে আছি। মেয়েদের লাইনে আরো বেশি ভীড়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স শেফালী রানী জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন প্রদানের শুরুতেই টিকা কেন্দ্রে তেমন একটা ভীড় ছিলা না। অনেক সময় আমাদের মেয়েরা ভ্যাকসিন নিয়ে বসে থাকতেন। টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ভীড় সামাল দিতে সদর হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা টিকা কেন্দ্র খোলা হযেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক সময় টিকা কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়ন করতে হয়েছে। এখন মানুষ টিকা নিতে ব্যাপক আগ্রহী। সুস্থ্য থাকতে বৃদ্ধ পুরুষ-মহিলারাও টিকা নিচ্ছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেনোফর্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করছেন। এসময় দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় সেনোফর্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ১ লক্ষ ৫১ হাজার ২৬৫ জন। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় সেনোফর্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮ হাজার ৯১৯ জন ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯৩৭ জন।
এছাড়া জেলায় ৮৭ হাজার ৮২৬ জন এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮০ হাজার ৬১ জন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসেন সাফায়াত জানান, জেলায় ভ্যাকসিন প্রদানের শুরুতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন সব শ্রেণী পেশার মানুষ টিকা গ্রহণে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার শুরুতেই টিকা কেন্দ্রে মানুষের ভীড় বেড়েছে। জেলা প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেনোফর্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করছেন। এসময় দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। দিনদিন এসংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে। তবে প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও বর্তমানে প্রতিটি কেন্দ্রে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে টিকা গ্রহণ করছেন। ক্রমেই জেলার টিকা কেন্দ্র গুলোতে মানুষের ভীড় বাড়ছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এএ