খুলনা মহানগরীর সড়ক মহাসড়কগুলো এখন ইজিবাইকের দখলে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর অলিগলি। এর প্রকৃত সংখ্যা কেউ জানে না। যদিও যানজট কমানোর জন্য দু’বছর আগে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে চলাচলের জন্য ৭ হাজার ৮৯৫ টি লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
২০১০ সালের শেষের দিকে নগরীতে ইজিবাইক চালু হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে অল্প খরচে অধিক দূরত্বে পৌছানোর জন্য বাহনটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে নগরীতে বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। গত ১০ বছরে জনপ্রিয় এই বাহনটি এখন অনেকটা বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। ইজিবাইকের কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা রবিউল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, ইজিবাইকের প্রকৃত সংখ্যা তার জানা নেই। নগরীতে চলাচলের জন্য গেল বছরের আগের বছর সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ৭ হাজার ৮৯৫ জনকে ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করেন। আপাতত এই প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ভোরে খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজিবাইক নগরীতে প্রবেশ করছে। যার কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। নগরীতে আটটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে ওই সব প্রবেশদ্বারে পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের কিছু লোক নিয়োগ করা হয়েছিল। করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ইজিবাইক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে নগরীতে বাইরের বাহনগুলো প্রবেশ করে যানজট সৃষ্টি করছে। যে সকল ইজিবাইকের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের কাছ থেকে জরিমামা ও মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে গত ছয়মাসে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের।
অথচ গত দু’বছর আগে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে খুলনা জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সভা করা হয়। সেখানে ইজিবাইক ও যন্ত্রাংশের আমদানি নিষিদ্ধের ওপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি বলে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার এ কর্মকর্তা জানান। ঐ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় সোনাডাঙ্গাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন শো-রুম দেখা যাচ্ছে। ফলে নগরীতে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে ইজিবাইকের সংখ্যা।
ইজিবাইক চালক শামীম। থাকেন নগরীর বকশিপাড়ায়। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট ) রাতে জানান, ইজিবাইকের লাইসেন্স করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এটি করতে তার সাড়ে ১০ হাজার টাকা সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করতে হয়েছে। এখন তো লাইসেন্স ‘ভাড়ায়’ পাওয়া যায়। প্রতিদিন ২৫০ টাকা।
ইজিবাইক চালক মুনসুর জানান, রীতিমতো পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নগরীতে চলছে অবৈধ ইজিবাইক। লাইসেন্সধারীরা তো চলছে, সাথে অবৈধরাও। গাড়িতে সিটি কর্পোরেশনের স্টিকার লাগিয়ে লাইসেন্স অন্যকে ভাড়া দিচ্ছে কিছু ড্রাইভার। পুলিশের হাতে আটক হলে ডেকে আনা হয় ভাড়ায় চালিত গাড়ির মালিককে। তখন পুলিশের সামনে অবৈধ ওই গাড়িটি আর আনা হয় না।
আরেক চালক শহীদ জানান, এখন সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তার উদাসীনতার কারণে নগরীতে অবৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিটি মোড়ে কিছু ট্রাফিক পুলিশকে এরা মাসোয়ারা দেয়। এ কারণে তারা ইজিবাইকের কাগজপত্র না দেখে ছেড়ে দেয়। নগরীতে চলাচলের নিয়ম না জানার কারণে ছোটখাট দুর্ঘটনা ও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একটি গাড়ির বৈধ কাগজের অনুকূলে একাধিক ইজিবাইক চলছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
ইজিবাইক যাত্রী আব্দুল আওয়াল জানান, নগরীতে ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ চালকের কোন দক্ষতা নেই। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। যার ফলে ছোটখাট দুর্ঘটনাসহ শহরে যানজট লেগেই থাকছে।
মহানগর ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি কমিশনার খন্দকার আবু হাসান জানান, করোনার আগে ও পরে অবৈধ ইজিবাইক আটক করা হয়েছে। এখনও আটক করা হচ্ছে। তবে দু’চার দিন আটক রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি লাইসেন্সের অনুকূলে একাধিক গাড়ি চলছে বলে তিনিও জানান। তবে নগরীতে অতিরিক্ত ইজিবাইক বন্ধে সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকা দরকার বলে মনে করেন ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা ।
খুলনা কগেজেট/এএ