খুলনার কয়রা নানা অনিয়মের মাঝে ট্যাংক বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক অভিযোগ নিষ্পত্তি না করেই নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে সিএনআরএস সংস্থার খাবার পানি সংরক্ষণের ট্যাংক বিতরণ ও স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
অপরদিকে ট্যাংক স্থাপনের নির্মাণ ও মালামাল সামগ্রী দীর্ঘ প্রায় এক দেড় বছর যাবত গ্রাজুয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টি ও নোনা পানিতে ভিজে রোদে পুড়ে মালামাল সামগ্রির মান নষ্ট হওয়ায় ট্যাংক স্থাপনের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটি দখল করে দীর্ঘদিন যাবত মালামাল সামগ্রী রাখায় বিদ্যালয় নিকটবর্তী শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুব সমাজের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কয়রা সিএনআরএস সংস্থার অফিস সূত্রে জানা যায়, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, বাংলাদেশ সরকার এর নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপির যৌথ অর্থায়নে`সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ` (সিএনআরএস) এর তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় আম্পান বিধ্বস্ত উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১৬ টি ওয়ার্ডের সুবিধাবঞ্চিত ১৭২৯ পরিবারের মাঝে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে দুই হাজার লিটার এর পানির ট্যাংক বিতরণ ও স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্যাংকসহ প্রতিস্থাপন খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও তালিকা প্রস্তুতিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ ও স্থাপনের কথা থাকলেও তালিকায় অধিকাংশ বিত্তশালী, বাড়িতে খাবার পানির উৎস আছে অধিকাংশ এমন পরিবারের নাম থাকায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ ফুঁসে ওঠে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর শত শত লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় বিতরণ কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় কর্তৃপক্ষ (সিএনআরএস) জানায়, তালিকায় কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, পরবর্তীতে সংশোধিত তালিকা করে বিতরণ ও স্থাপন কাজ শুরু করা হবে । কিন্তু তালিকা সংশোধন না করে ট্যাংক বিতরণ শুরু হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, পানির সমস্যা আমাদের এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা কিন্তু সংস্থাটি তালিকা প্রস্তুতিতে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। তালিকায় সুবিধাবঞ্চিতদের একটি বড় অংশ বাদ পড়ে বেশি অংশ বিত্তশালীদের নাম ওঠায় প্রকল্পের কাঙ্খিত সফলতা আসছে না। সংস্থাটি জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় না করে তাদের ইচ্ছামাফিক কাজ করছে তাছাড়া দীর্ঘ এক বছর যাবত মালামাল সামগ্রী রোদ্দুরে ও বৃষ্টিতে ভিজে মান নষ্ট হয়েছে। একই কথা বলেন মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু।
মহারাজপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক উপকারভোগী বলেন, সিএনআরএস সংস্থাটি নগদ ৩ হাজার টাকা নিয়ে ট্যাংকসহ যে মালামাল দিচ্ছে বুঝতেছিনা কতদিন টিকবে, রোদ বৃষ্টি ও নোনা পানিতে ভিজে মালামাল সামগ্রীর মান নষ্ট হয়েছে। খাবার পানির তীব্র সংকটের কারণে নিতে বাধ্য হচ্ছি।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে কয়রা উপজেলা সিএনআরএস প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক, সরোয়ার হোসেন বলেন, তালিকায় প্রথম অসংগতি থাকলেও অভিযোগ হওয়ার পর তা সংশোধন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, তালিকায় যাদের বিষয়ে কোনো প্রকার অভিযোগ নেই জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে এমন সুবিধাভোগী বাছাই পূর্বক মালামাল সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া যে সমস্ত মালামালের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে সেগুলো না দেয়ার জন্য সিএনআরএস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইকবাল হোসেন বলেন, প্রথমে অসঙ্গতি থাকলেও পরে তালিকা ঠিক করা হয়েছে। এরপরেও যদি কোন প্রকার অনিয়ম হয় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই