দীর্ঘ দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন। একইভাবে গত দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে বিভাগ। মেশিন নষ্ট ও ফিল্ম সংকটের অজুহাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী সেবার এই দু’টি বিভাগ বন্ধ রাখায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগিরা। কয়েক গুন বেশি টাকা খরচ করে তাদেরকে বাইরের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে করিয়ে আনতে হচ্ছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গত ২৮ দিন যাবত হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগে ভর্তি রয়েছেন কালিগঞ্জ উপজেলার গড়িয়ামহলের ওয়াজেদ গাইনের ছেলে আবু মুছা। ভাঙ্গা পা নিয়ে সুচিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। গত ২৮ দিনে একবারও তিনি সদর হাসপাতাল থেকে এক্স-রে করাতে পারেননি। ভাঙ্গা পা নিয়েই এক্স-রে করাতে কয়েকবার তাকে যেতে হয়েছে সদর হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
এ অভিযোগ শুধু আবু মুছার একারই নয়, হাসপাতালে ভর্তি কালিগঞ্জের আবু বক্কার সিদ্দিক, সদর উপজেলার ঘুড্ডেরডাঙ্গী এলাকার শেখ আব্দুর রশিদ ও ফারুক হোসেনের। একই কথা জানিয়ে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগির স্বজন সদর উপজেলার গোপিনাথপুর এলাকার দিপংকর মন্ডল জানান, তার একজন আত্মীয় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর অহত হলে তাকে আনা হয় সদর হাসপাতালের বহিঃবিভাগে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তার পায়ের ও হাতের এক্স-রে করাতে বলেন। এসময় তারা হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে গেলে বলা হয় ফিল্ম নেই, এক্স-রে বন্ধ। বাধ্য হয়ে ভ্যানে তুলে রোগিকে নিয়ে যেতে হয় শহরের একটি ক্লিনিকে। সেখান থেকে আবার তাকে সদর হাপাতালে আনতে হয় পায়ে প্লাষ্টার করার জন্য। এতে রোগির কষ্ট বৃদ্ধির সাথে টাকাও বেশি খরচ হয়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ফিল্ম সংকটের কথা বলে হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এক্স-রে বিভাগের খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আর তা হলো, গত ২ বছর ধরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসা সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, করোনাকালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে সিটি স্ক্যান একটি অন্যতম প্রধান। মূলত বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিটি স্ক্যান মেশিনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে হাসপাতালের বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে চার থেকে ছয় হাজার টাকা দিয়ে সিটি স্ক্যান করাতে হচ্ছে। যেখানে সদর হাসপাতালে মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ করে সিটি স্ক্যান করা সম্ভব ছিল। এভাবে রোগিদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে সাথে বাড়ছে ভোগান্তি।
প্রতিদিন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিসিন ও অর্থপেডিক্স বিভাগে কয়েক শ’ রোগি চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। করোনাকালিন এসময় অধিকাংশ রোগির সিটি স্ক্যান জরুরী হয়ে পড়ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারনে হাসপাতাল থেকে রোগিরা অত্যাবশ্যকীয় এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিনটি বন্ধ থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়েত বলেন, এক্স-রে বিভাগে ফিল্ম ফুরিয়ে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা জানিয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। আর কারিগরি ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যান মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে নিয়মানুযায়ী মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
খুলনা গেজেট/এএ