আফগানিস্তানের কাবুলে ভয়াবহ হামলায় ১২ মার্কিন সেনাসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪০ জন। এর মধ্যেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাবুল থেকে বিমান চলাচল অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বৃহস্পতিবার বাইডেন বলেছেন, আমরা অবশ্যই এই মিশনটি সম্পন্ন করব। যারা এই হামলার পেছনে দায়ী তাদেরকেও খুঁজে বের করব।
১৫ আগস্ট তালেবানদের দখলে নেওয়ার পর কাবুল থেকে এক লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৩১ আগস্ট মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার আগে বহু মানুষ দেশটি ছাড়তে চাচ্ছেন। বাইডেন মিশনটি শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, আমরা সন্ত্রাসী হামলায় ফলে আমরা পিছিয়ে যাব না।
বৃহস্পতিবারের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাবুল হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রথম বিস্ফোরণটি হয় অ্যাবি গেটের কাছে। যেখানে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী বিমানবন্দরের দায়িত্বে ছিল। হামলার পর গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এর কিছুক্ষণ পরেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে ব্যারন হোটেলের পাশে। যেখানে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ প্রত্যাশী আফগানদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছিল।
আফগান সাংবাদিক বিলাল সারওয়ারি এক টুইটে বলেছেন, বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের বাইরে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি পয়ঃনিষ্কাশন খালের পাশে নারী শিশুসহ অনেক আফগান অপেক্ষা করছিলেন। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দেয়। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং বন্ধু আমাকে বলেছেন, বিস্ফোরণের পর আরেক হামলাকারী গুলিবর্ষণ শুরু করে।
আল-জাজিরার আলী এম লতিফি কাবুল থেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে হতাহতদের নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছে কয়েক ডজন গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৪০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৯০ জন।
কাবুলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিনিধি সেকেন্দার কারমানি বলেন, অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিওতে কাবুলের বিমানবন্দরে লাশের স্তূপ দেখা গেছে। যে কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরের বিস্ফোরণের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিস্ফোরণটি ‘সত্যিই শক্তিশালী’ ছিল। তিনি বলেছেন, আমরা বিমানবন্দরের যেখানে ছিলাম, সেখান হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসআইএস-কে) আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। আইএসআইএসের হামলার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে নাগরিকদের দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া।
পরে তারা আমাক নিউজ এজেন্সি টেলিগ্রাম বার্তায় বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগানিস্তান শাখা ‘কট্টর তালিবান-বিরোধী’ হিসেবে পরিচিত। গত কয়েক বছরে আইএসের হামলায় বেশ কিছু তালেবানের মৃত্যুও হয়েছে। আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির অনুগত এই বাহিনী সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের একাংশ নিয়ে ঐতিহাসিক খোরাসান অঞ্চলে নয়া ইসলামিক রাষ্ট্র গড়তে চায়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ও আল জাজিরা
খুলনা গেজেট/কেএম