ম্যাচের ভাগ্য দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। একবার যদি পাকিস্তান এগিয়ে যায়, পরক্ষণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ১৬৭ রানের লক্ষ্য পার করতেই এমন গলদঘর্ম হচ্ছিল স্বাগতিকরা। তাতে ম্যাচে ভর করেছিল যারপরনাই রোমাঞ্চ। শেষ হাসিটা অবশ্য হেসেছে উইন্ডিজ। জিতেছে এক উইকেটের ব্যবধানে।
চতুর্থ দিনটা যেভাবে শেষ করেছিল পাকিস্তান, তাতে মনে হচ্ছিল, বড় লিড বুঝি অবশ্যম্ভাবী। উইকেটে ছিলেন বাবর আজম, তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন ফাহিম আশরাফও। কিন্তু চতুর্থ দিনের শুরুতে ক্যারিবীয় পেসে সর্বনাশ হয় দু’জনের। পাকিস্তানের বড় লিডের স্বপ্নও খায় বড় এক ধাক্কা।
দিনের শুরুতে ফাহিম শিকার বনে যান কেমার রোচের, এরপর আগের দিনের ৫৪ এর সঙ্গে এক রান যোগ করেই বিদায় নেন বাবরও। আগের দিন দুটো উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন জেইডেন সিলস, ফাহিম বাবরের বিদায়ের পর পাকিস্তানের লেজটা মুড়ে দেওয়ার কাজটা সেরে ফেলেন তিনি।
তাতে উইন্ডিজের একটা রেকর্ডের মালিকও বনে যান তিনি। ক্যারিবীয় ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ পাঁচ উইকেট শিকারি এখন তিনি। ১৯ বছর ৩৪০ দিনে গড়েছেন এই রেকর্ড। ভেঙে দিয়েছেন অ্যালফ ভ্যালেন্টাইনের কীর্তি, যিনি ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ২০ বছর ৪১ দিন বয়সে। ক্যারিবীয়দের সম্মিলিত আক্রমণে সফরকারীরা গুটিয়ে যায় ২০৩ রানে। তাতে স্কোরবোর্ডে লিডটা জমা পড়ে ১৬৭ রানের।
মাত্রই চতুর্থ দিন চলছে। হাতে আছে আরও পাঁচ সেশনেরও বেশি সময়। তার ওপর ‘মামুলি’ লক্ষ্য। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের হাতে লড়াইয়ের রসদ ছিল সামান্যই। তবু সফরকারীরা ম্যাচে লড়েছে বোলারদের কল্যাণে।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, শাহিন শাহ আফ্রিদির কল্যাণে। কাইরন পাওয়েলকে বিদায় করে শুরু, এরপর ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট আর এনক্রুমাহ বোনারকে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন তিনি। তাতে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই তিন উইকেট হাওয়া উইন্ডিজের। স্বাগতিকদের তরুণ দলে তাতে ভর করেছিল কিছুটা স্নায়ুচাপও।
তবে বিরতির পর সে চাপটা পাকিস্তানের ওপরই চলে আসে পরের জুটির প্রতি আক্রমণে। জের্মাইন ব্ল্যাকউড আর রস্টন চেজে ভর করে উইন্ডিজ পায় ৬৮ রানের এক জুটি। তবে এরপরই যেন আবারও ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হলো স্বাগতিকদের ইনিংস।
কাইল মেয়ার্স আর জেসন হোল্ডার, দুজনেই ফিরলেন অল্প রানে; মাঝে ব্ল্যাকউডও। তাতে ক্যারিবীয়রা সপ্তম উইকেট হারাল ১১৪ রানে। লক্ষ্যটা তখনো ৫৪ রান দূরে, ক্রিজে তখন শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভা। তিনিও করতে পারলেন মাত্র ১৩, ফেরেন দলকে লক্ষ্য থেকে ২৮ রান দূরে রেখে।
জোমেল ওয়ারিক্যান ছিলেন, একটা চার মেরে লক্ষ্যটাকে ২০-এর নিচেও নামিয়ে আনেন। কিন্তু নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিও ফেরেন আফ্রিদির শিকার হয়ে, দলীয় রান তখন ১৫১! এরপরের গল্পটা রোচের। ৫২ বলে করলেন মহামূল্য ৩০, তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন সিলস। তাতে উইন্ডিজ জেতে ১ উইকেটে।
তবে এর আগে পাকিস্তান দুটো ভুলও করেছে বটে। ২১তম ওভারে ব্ল্যাকউডকে কট বিহাইন্ড করিয়েছিলেন হাসান আলি, কিন্তু মাঠে থাকা কেউ বুঝতেই পারেননি বিষয়টা! সেই হাসানই আবার ফেলেছেন ক্যাচ, রোচ যখন ব্যাট করছেন ১৬ রান নিয়ে তখন। হারের পর যে দুটো সুযোগ নষ্টের আক্ষেপ কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে পাকিস্তানকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ২১৭ (ফাওয়াদ আলম ৫৬; জেসন হোল্ডার ৩-২৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ২৫৩ (ব্রাথওয়েট ৯৭; শাহিন ৪-৫৯)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস ২০৩ (বাবর ৫৫; সিলস ৫-৫৫)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস ১৬৮-৯ (ব্ল্যাকউড ৫৫; আফ্রিদি ৪-৫০)
ফল- উইন্ডিজ ১ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ- উইন্ডিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা- জেইডেন সিলস।
খুলনা গেজেট/কেএম