খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

‘অন্যের জন্য ফাঁদ পেতে এখন…।’ প্রচলিত এই কথার বাকিটা সবার জানা। অন্যের বিপদ ঘটাতে গিয়ে নিজে বিপদে পড়া—লোকের কাছে কৌশলটি নেতিবাচক হলেও ক্রিকেটে ইতিবাচক। নইলে ‘ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া’ কথাটা থাকত না।

মার্ক টেলরের মতে, বাংলাদেশ সফরে ‘অস্ট্রেলিয়া এ দল’ খেলছে। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের কাছেই বাংলাদেশের স্পিনবান্ধব কন্ডিশন একদম অচেনা। ব্যাটিংটা নড়বড়ে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে?

প্রশ্নটা অবশ্যই নেতিবাচক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ায় তা আরও নেতিবাচক মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ‘রোগ’টাও তো পুরোনো। ব্যাটিংয়ে ঘরের মাঠে সুবিধাটা নিতে না পারলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কীভাবে ভালো করা সম্ভব?

আরব আমিরাত ও ওমানের কন্ডিশন আরও শুষ্ক এবং ব্যাটিংবান্ধব। স্পিনাররাও ভালো সহায়তা পান। ব্যাটিংয়ে হাত পাকানোর প্রস্তুতিটা তো এখনই সেরে ফেলার সময়। কিন্তু সিরিজ জয়ের উৎসবের মাঝেও ‘তা আর হচ্ছে কোথায়’ প্রশ্নটা থেকে যায়।

শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলতি সিরিজ নয়, কোনো দল সফরে এলেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট মন্থর, রান তোলা কঠিন। এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এমন উইকেটেও তো বড় রান করেছেন। কিন্তু চলতি সিরিজের স্কোর দেখুন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে উঠেছে ৭ উইকেটে ১৩১। দ্বিতীয় ম্যাচে ১২১ রান তাড়া করতে নেমে জয় এসেছে ৮ বল হাতে রেখে। কাল তৃতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে উঠেছে ৯ উইকেটে ১২৭। আজও আগে ব্যাট করে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু রান উঠেছে ৯ উইকেটে ১০৪।

উইকেটের আচরণ বিচারে সব ম্যাচেই যে রান খুব কম উঠেছে, তা নয়। কিন্তু মাঠ, কন্ডিশন, উইকেটের আচরণ—সবই জানা। বল থেমে থেমে ব্যাটে আসে, সেই প্রতিবন্ধকতাটুকুও অজানা নয়।

দেশের ব্যাটসম্যানরা এর মধ্যেই বেড়ে উঠছেন। তা, যে আঙিনায় বেড়ে ওঠা, সেখানকার সমস্যাগুলো জয় করতে না শিখলে অন্যের আঙিনায় গিয়ে ছড়ি ঘোরানো সম্ভব হবে কীভাবে? বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নই-বা বাস্তবায়ন হবে কীভাবে, যদি এই বহু পুরোনো ব্যাধির ওষুধ না মেলে!

ওষুধটা বোধ হয় ‘ইনটেন্ট’—টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শব্দটি খুব জনপ্রিয়। অর্থাৎ অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য কিংবা লক্ষ্য। খেলাটা যে সংস্করণের, তার মেজাজ বুঝে ব্যাট করা। এ উইকেটে ব্যাট করা যেহেতু খুব কঠিন, শব্দটির অর্থের পূর্ণ প্রয়োগ হয়তো সম্ভব নয়। তাই বলে কারও মধ্যে সেই চেষ্টাটা সেভাবে দেখা যাবে না, সেটিও নেতিবাচক।

অন্তত সামনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিচারে এই কঠিন উইকেটেই দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় হাত পাকানো যেত, সিরিজ জয় যেহেতু নিশ্চিত হয়ে গেছে, তা করা যেত আজকের ম্যাচ থেকেই। কিন্তু এই চার ম্যাচের মধ্যে ইনিংসে সবচেয়ে কম রান উঠল আজই!

‘রোগ’টা নিয়ে আরেকটু কাটাছেঁড়া করা যায়। সবার আগে চোখে বেঁধে ওপেনিং জুটির ধারাবাহিক ব্যর্থতা। প্রথম ম্যাচে ১৫ (৩.৩ ওভার), দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ (২.২ ওভার), তৃতীয় ম্যাচে ৩ (১.৬ ওভার) রান উঠেছে সৌম্য সরকার-মোহাম্মদ নাঈমের জুটিতে।

বলসংখ্যা ও রান দেখলেই ওপেনারদের খামতিটা পরিষ্কার। এই মন্থর ও বল নিচু হয়ে আসা উইকেটেও বুকসমান বাউন্স পেয়েছেন মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউডরা। উঠে আসা বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা চিরকালীন। প্রথম ম্যাচে সৌম্যর আউটটি কথা মনে করেন দেখুন, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হান্নান সরকারের ভাষায়, ‘শরীর লক (এক জায়গায় আটকে যাওয়া) হয়ে গিয়েছিল।’

পরের ম্যাচে মিচেল স্টার্কের বলে সোজা ব্যাটে না খেলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের ব্যাখ্যা, ‘মাথায় অনেক কিছু খেলা করলে এমন হয়।’ পরে দুই ম্যাচেও অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সৌম্যর খোঁচা দেখে মনে হয়েছে চাপে আছেন, আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছেন। অথচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সৌম্যর স্ট্রোক-মেকিং হতে পারে বড় ‘অস্ত্র’—কিন্তু সেই অস্ত্র যদি এখন শাণ দেওয়া না হয়, মানে দ্রুত রান তোলার ‘ইনটেন্ট’ যদি না দেখা যায়, তাহলে সমস্যাটা থেকেই যায়।

মোহাম্মদ নাঈম দু-এক ম্যাচে ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারছেন না, রানও দ্রুত তুলতে পারছেন না। আজ যেমন ৩৬ বলে করেছেন ২৮। এখানেও সেই ‘ইনটেন্ট’-এর প্রশ্ন। তৃতীয় ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর মন্থর ফিফটি ছিল সময়োচিত। একাই ইনিংস টানতে হয়েছে। কিন্তু আগের দুই ম্যাচের স্কোরকার্ডে যদি তাকানো হয়—২০ বলে ২০ এবং ০।

‘ডাক’ মারতেই পারেন যে কেউ, কিন্তু বিস্ফোরক কোনো ইনিংস, অন্তত ধারাবাহিকভাবে ১৩০‍+ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! আফিফ হোসেনের মধ্যে সেই চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আরও বড় প্রশ্ন হলো, তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারে কি আরেকটু ওপরে আনা যায়? দ্রুত রান তোলার পাশাপাশি ধরে খেলার প্রমাণও দিয়েছেন এই তরুণ। সে ক্ষেত্রে আর যা-ই হোক, অন্তত ক্ষতিবৃদ্ধি নেই।

‘ডট’ বলের সংখ্যা নিয়েও ভাবনার জায়গা রয়েছে। এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে ডটসংখ্যা ৪৭, দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৫, তৃতীয় ম্যাচে ৫০ এবং আজ চতুর্থ ম্যাচে আরও বেশি—৬২! এক ইনিংসে ১২০টি বৈধ ডেলিভারির খেলায় যদি গড়ে অন্তত ৫০টি করে ডেলিভারি ডট যায়, তাহলে চাপটা তো বাড়বেই। স্ট্রাইক অদলবদল করে খেলার বদলে কয়েকটি বল ডট দিয়ে একটি বাউন্ডারি বের করার চেষ্টা—এই প্রবণতা থেকে ব্যাটসম্যানদের সম্ভবত বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, বল ডট গেলে চাপ বাড়ে, বাউন্ডারি বের করার ঝুঁকি নিতে হয়, সহজাত খেলাটা সম্ভব হয় না।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং নিয়ে এই ‘ফাইন টিউনিং’গুলো বোধ হয় জরুরি। ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু, মিডল অর্ডারে নিয়মিত জুটি গড়ার প্রবণতা এবং ভালোভাবে শেষ করা—দ্রুত রান তোলার মৌলিক বিষয়টি ধরে রেখে এসবই তো টি-টোয়েন্টি খেলার কৌশল। বাংলাদেশ এসব কৌশল কি ভালোভাবে রপ্ত করেছে?

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিতের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুই মাস আগে এ প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!