সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার( ১৪ জুলাই)। ২0১৯ সালের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রংপুরে এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে দলটির নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে এইচ এম এরশাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ মাহফিল, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, অসহায়-দুস্থদের মাঝে খাদ্যসহায়তা প্রদান ও উন্নত খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রয়াত নেতার সমাধিস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি স্বল্প আকারে পালন করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকতে বলা হয়েছে।
কর্মসূচিগুলো হলো- সকাল ৭টায় রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন (দলীয় পতাকা অর্ধ্ব নমিত থাকবে), কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল ১০টায় নগরীর দর্শনা মোড় পল্লী নিবাসে প্রিয় নেতার সমাধিতে পুষ্প স্থাবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, সূরা ফাতিহা পাঠ, বেলা ১১টায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনু্ঠিত হবে।
এ ছাড়া দিনব্যাপী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোরআন তেলাওয়াত ও বাদ আসর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। জেলার প্রতিটি পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়নে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে এরশাদের সমাধি নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তবে আগামী প্রজন্মের মাঝে এরশাদের স্মৃতি তুলে ধরতে এরশাদ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
উল্লেখ্য, ১৯৮২-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৯ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ গ্রাম-বাংলার উন্নয়নে কাজ করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক বিল মওকুফসহ উপজেলা ব্যবস্থার প্রবর্তকও ছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধান। তার আমলেই মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওষুধ নীতি প্রণয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ঢাকার বেড়ি বাঁধ নির্মাণ, যমুনা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ তার যুগোপযোগী সিদ্ধান্তগুলো এখনো প্রসংশনীয় ও অমলিন।
১৯৮৬ সালে এরশাদ প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় পার্টি। শুরু থেকেই বৃহত্তর রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গে পরিণত হয়। আর তাই সাবেক সেনা প্রধান হলেও মৃত্যুর পর ভক্ত-অনুসারীদের দাবির মুখে এরশাদকে রংপুরের পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হয়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে পরিবারের সঙ্গে রংপুরে চলে আসেন। নব্বই বছর বয়সে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই