সরকারের কাছে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়ার একদিনের মাথায় ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। পূর্বের দরে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হলেও বেড়েছে খোলা তেলের দাম। দাম বৃদ্ধির আগাম সংবাদ জেনে খুলনার অনেক ব্যবসায়ীর ঘর থেকে বোতলজাত সয়াবিন উধাও হয়ে গেছে। অপরদিকে চিনি সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বর্ধিত দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধিকে সাধারণ ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে অভিযোগ করেছেন।
গত ৩ অক্টোবর বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটার প্রতি ১৪ টাকা ও খোলা সয়াবিনে ১৭ টাকা কমিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই দাম অনুযায়ী খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৫৮ টাকা এবং বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন বিক্রি হওয়ার কথা ১৭৮ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হওয়ার কথা ৮৮০ টাকা। কিন্তু খুলনার ব্যবসায়ীরা সে দামে বিক্রি করেনি। উপরন্তু ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার সয়াবিন ১৯২ টাকায় বিক্রি করছেন। একই ভাবে ৫ লিটারের বোতল ৯৪০ টাকা ও খোলা এক কেজি সয়াবিন ১৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর একদিনের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিকেজি সয়াবিন তেল এখন তারা ১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। যা ১৫ দিন আগেও তারা ১৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মো: শাহ আলম মৃধা বলেন, বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন তেলে ৬শ’ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাকে আজ বেশী দরে কিনে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, খুচরা তেলের দাম ১৭০ টাকায় এসেছিল। কিন্তু দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়ায় বেড়ে গেছে তেলের দাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় বাজারের ব্যবসায়ী বলেন, দেশ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা ইচ্ছা মতো দাম বৃদ্ধি করে। সরকারের নিকট প্রস্তাব দেওয়ার আগে তেলের দাম বাড়িয়েছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। দাম বাড়ানোর পর তারা সরকারের নিকট প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা খুব দু:খজনক ব্যাপার।
রূপসা বাজারের ব্যবসায়ী নান্টু বলেন, বোতলজাত তেল কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছেনা। আগের কিছু তেল আছে, তবে তিনি পূর্বের দরে বিক্রি করছেন।
ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজারে তেলের ব্যাপারে তথ্য জানতে গেলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন, তাদের কাছে কোন তেল নেই।
অপরদিকে চিনির সরবরাহ সংকট দেখিয়ে খুলনার ব্যবসায়ীরা বর্ধিত দরে চিনি বিক্রি করছেন। প্রতিকেজি চিনি ১১০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
দাম বাড়তে পারে এমন সংবাদ জেনে তেল কিনতে বড় বাজারে এসেছিলেন আফরোজা বেগম। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। ৩ অক্টোবর সরকার ভোজ্য তেলের দাম কমিয়ে দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সে সময়ে ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি না করে বর্ধিত দরে বিক্রি করেছেন। আমাদের খেতে হয় বলে কিনতে হয়।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোল্লা নাসির উদ্দিন বলেন, কোন জিনিষের দাম কম আছে? একবার বাড়লে তা আর কমতে চায়না। ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি তার।
বাজারে তেল কিনতে আসা আফরোজা বেগম জানান, আমরা সাধারণ মানুষ। আয় রোজগার নেই আমাদের সেরকম। প্রতিনিয়ত নিত্য পণ্যের দাম বাড়ার ফলে, আমাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। যা আয় হয় সে অনুয়ায়ী সারা মাসের পণ্য ক্রয় করা কষ্টকর হয়ে দাড়ায় আমাদের জন্য। তেলের দাম আবার বাড়ায় আগের চেয়ে পরিমাণে কম ব্যবহার করতে হবে। তবে দাম কেন বাড়ছে তা দেখা দরকার।