কার্যাদেশে ঠিকাদারকে সময় দেওয়া হয়েছিলো ৯ মাস। অথচ সাড়ে ৪ বছরেও শেষ হয়নি দিঘলিয়ার হাজী ছায়েমউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের কাজ। কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। কাজের তদারকি সংস্থা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ রাজা খুলনা গেজেটকে বলেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও আসবাবপত্রের সংকটের কারণে ২০১২ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ১ম পর্যায়ে বিদ্যালয়ে চার তলা ফাউন্ডেশনের তিন কক্ষের একটি একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় (২য় ও তয় তলা) নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট মেসার্স আলী ট্রেডার্সের নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে। কার্যাদেশ পাওয়ার কিছুদিন পর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। শুধুমাত্র তৃতীয় তলার ছাঁদ ও কলাম নির্মাণ করে অজ্ঞাত কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৬ মে সম্প্রসারণের কাজটি শেষ হওয়ার কথা। অথচ সাড়ে ৪ বছর হলেও কাজটি এখনও সম্পন্ন হয়নি। সাড়ে চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। ৮০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে।
এ দিকে নির্মিত দ্বিতীয় তলার ছাঁদ এবং কলাম উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। সাড়ে তিন বছর যাবত রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিঁজছে। ফলশ্রুতিতে ভবনের স্থায়ীত্ব কমছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলীকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজ সম্পন্ন না করার অভিযোগ করেছি। প্রতিবারই তিনি জানান, ‘ঠিকাদারকে বলেছি কাজটি দ্রুত শেষ করবে”। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু বিষয়টির কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় অবকাঠামো ও আসবাবপত্রের দারুন সংকট রয়েছে।
দেখা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৭’ শ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে। ক্লাস রুম এবং আসবাবপত্রের স্বল্পতার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষ ছাত্র-ছাত্রীরা দীর্ঘক্ষন বসতে না পেরে বাড়ি চলে যাচ্ছে।
শিক্ষকরা জানান, সম্প্রসারিত ভবনের দোতালায় জানালা দরজাবিহীন কক্ষে আমাদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। দোতলার বারান্দায় পিলারের সঙ্গে বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। এটা কোন ক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয়। আল্লাহ না করুক কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে?
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মুঃ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, বাকী কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহে ঠিকাদার কাজ শুরু করে বাকী কাজ শেষ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারীকে কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। মোবাইল ফোনে বলা যাবে না। সরাসরি আসেন। সবকিছু বলবো।