দীর্ঘ আট বছর পর আগামি ৭ জানুয়ারি যশোরে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি নিয়ে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। প্রার্থীদের এ ধরণের প্রচারনায় অবাক হচ্ছেন ভোটাররা। নির্বাচনে ১৮ পদের বিপরীতে ৩৭ জন অংশ নিচ্ছেন।ভোটাররা বলছেন বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেলই শক্তিশালী। ফলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নির্বাচনে যোগ্য নেতা চেম্বারের নেতৃত্বে আসবেন বলে তারা আশাবাদী।
অন্যদিকে, প্রার্থীরা বলছেন জয় পরাজয় থাকবেই। নির্বাচনে যেই জয়ী হোক তারা মেনে নেবেন। চেম্বারের কল্যাণে সবাই একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। কবু-মিজান-মিঠু নেতৃত্বাধীন প্যানেলের নাম দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদ। আরেকটি হচ্ছে মিজান-বাবু-সুজা-ইদুলের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ।
সূত্র জানায়, চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে ২১ পদের মধ্যে ১২টি সাধারণ শ্রেণির ও ছয়টি রয়েছে সহযোগী শ্রেণি এবং তিনটি গ্রুপ শ্রেণি। নির্বাচনে ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের সাধারণ শ্রেণির ১২ পদের প্রার্থীরা হলেন, এএসএম হুমায়ুন কবীর কবু, মিজানুর রহমান, আসাদুজ্জামান মিঠু, উজির হোসেন, মাহাবুব আলম লাবলু, মহাসিন আলী মিলন, রবিউল ইসলাম রবি, রাজু আক্তার, জাকির হোসেন পলাশ, আহসান কবির নিপু, কামাল হোসেন পলাশ ও আহসান হাবিব চৌধুরী। সহযোগী ছয় পদের প্রার্থীরা হলেন, সাহিদুর রহমান টিটো, মশিয়ার রহমান, শাহীন রেজা, জিল্লুর রহমান, সাইদুর রহমান নিপু ও হাফিজুর রহমান শিলু।
এদিকে, ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ শ্রেণির প্রার্থীরা হলেন, মিজানুর রহমান খান, শেখ আতিকুর রহমান বাবু, সাজ্জাদুর রহমান সুজা, আব্দুল হামিদ চাকলাদার ইদুল, এহসানুর রহমান লিটু, কাসেদুজ্জামান সেলিম, সাকির আলী, শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু, সায়েম সিদ্দিক, মকছেদ আলী, এজাজ উদ্দিন টিপু ও খাইরুল কবীর। সহযোগী ছয় পদের প্রার্থীরা হলেন, সৈয়দ শাহজাহান আলী খোকন, সোহেল মাসুদ হাসান টিটো, তৌহিদুর রহমান, আজিজুর রহমান খান, ইদ্রিস আলী ও রিজভী জাহাঙ্গির কিবরিয়া। এছাড়া নির্বাচনে সহযোগি সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সৈয়দ এনামুল করীম।
এদিকে, গ্রুপ শ্রেণির তিন পদের বিপরীতে দুই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, কিন্তু এ পদের বিপরীতে কোনো প্রার্থী না থাকায় দু’জনেই বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল ও শহিদুল ইসলাম মিলন।
ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের প্রার্থী এএসএম হুমায়ুন কবীর কবু বলেন, তারা যশোর চেম্বার অব কমার্সকে ঢেলে সাজাতে চান। সংগঠনের নানা অসংগতি রয়েছে তা দুর করবেন। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট, ট্যাক্স, বিভিন্ন বিল নিয়ে সমস্যা সমাধান করবেন। এছাড়া কমিটির মেয়াদ শেষ হলেই যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা প্রদান করা যায়, সেই ব্যবস্থা করবেন।
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী শেখ আতিকুর রহমান বাবু বলেন, মুলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া। ব্যবসায়ীদের বিপদে আপদে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
আগামি ৭ জানুয়ারি সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দুই হাজার ৪৩ জন সদস্য তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের মধ্যে সাধারণ সদস্য রয়েছেন এক হাজার ৩১জন, সহযোগী সদস্য এক হাজার ১০ জন ও গ্রুপ শ্রেণির ভোটার রয়েছেন দু’জন।
নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক ও যশোরের সিনিয়র সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ জানান, ইতিমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষের দিকে। ৭ জানুয়ারি যশোর কালেক্টরেট স্কুল প্রাঙ্গণে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন হয়নি। ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল চেম্বারটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল বিজয়ী হয়। ২০১২ সালের ৩ মার্চ মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব বুঝে পান। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ১২ জুলাই ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করছেন প্রশাসক।
খুলনা গেজেট/ টি আই