খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  বেন‌জির প‌রিবা‌রের আরও ১১৯ টি স্থাবর-অস্থাবর সম্প‌ত্তি ক্রো‌কের নি‌র্দেশ আদাল‌তের

৩০ বছর ধরে পত্রিকা নিয়ে ছুটে চলেছেন মাসুদ রানা

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

ঘড়ির কাটা যখন ভোর ৬ টা, তখন ব্যস্ততা বেড়ে যায় পত্রিকা সরবরাহকারী (হকার) মাসুদ রানার। গন্তব্য দৌলতপুর পত্রিকা এজেন্সির দোকান। বিশেষ কারণে পত্রিকা ছাপা বন্ধ না থাকলে এটা তাঁর ৩৬৫ দিনের ব্যস্ততা। দায়িত্বশীল একটি পেশা। এই পেশা তিনি নিষ্ঠার সাথে গত ৩০ বছর যাবৎ বিরতিহীন ভাবে চালিয়ে আসছেন। শীত, গ্রীস্ম, বর্ষা, চৈত্রের খরতাপ, মৌসুমী নিম্নচাপ সহ সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগ উপেক্ষা করে তিনি ছুটে চলেন। এ কাজে তার প্রতিদিনের সাথী দুই চাকার একটি বাইসাইকেল। লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একটাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের হাতে তাদের পছন্দের পত্রিকাটি তুলে দেয়া।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটী ৮ নং ওয়ার্ডে মাসুদ রানার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ১৯৯১ সালে তাঁর বয়স যখন ২২ বছর তখন থেকে তিনি পত্রিকা সরবরাহকারী (হকার) পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। শুরুতে দিঘলিয়া উপজেলাধীন ১০ জন গ্রাহককে খুলনার আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক তথ্য, দৈনিক প্রবাহ এবং দৈনিক পাঠকের কাগজ সরবরাহের মাধ্যমে হকারী পেশা শুরু করেন। বর্তমানে দিঘলিয়া উপজেলার ৩ টি ইউনিয়ন দিঘলিয়া, বারাকপুর এবং সেনহাটীতে তাঁর গ্রাহক সংখ্যা ৩২৫ জন। প্রতিদিন তিনি এই তিন ইউনিয়নে ৪৪ কিঃমিঃ কাঁচা পাকা রাস্তা সাইকেল চালিয়ে গ্রাহকদের আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকা সরবরাহ করেন। এ কাজে তিনি ৩৫ শতাংশ হারে পত্রিকা মালিকদের কাছ থেকে কমিশন পান। এই কমিশনের টাকা দিয়েই তিনি সততার সাথে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছেন।

প্রতিদিন সকাল ৬ টায় সেনহাটী নিজ বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়ে দৌতলতপুর খেয়াঘাট ভৈরব নদী পার হয়ে নগরীর দৌলতপুর পত্রিকা এজেন্সি থেকে আঞ্চলিক এবং জাতীয় পত্রিকা সংগ্রহ করেন। এরপর প্রত্রিকাগুলি সাইকেলের পিছনে এবং সামনে ব্যাগে ভর্তি করে তাঁর ছুটে চলা শুরু হয়। শীত, বর্ষা, গ্রীস্ম, চৈত্রের খরতাপ, মৌসুমী নিম্নচাপসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ উপেক্ষা করে তিনি ছুটে চলেন। এ জাতীয় কোন বাঁধায় গত ৩০ বছর ধরে তিনি হার মানেনি। সময়মতো গ্রাহকের কাছে তাদের পছন্দসই পত্রিকা তুলে দেয়াই তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

গত ১৫ ডিসেম্বর দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের নীচে দেখা হয় পত্রিকা সরবরাহকারী (হকার) মাসুদ রানার সংগে। একান্ত আলাপচারীতায় দীর্ঘ ৩০ বছরের হকারি জীবনের অনেক সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, অনেক কষ্ট এবং এ পেশায় এলাকার মানুষের ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হকারি পেশা করতে গিয়ে উক্ত তিন ইউনিয়নসহ স্থানীয় প্রশাসনের অনেকের সাথে একটা সুসম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এলাকার মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। কেউ আমার এই পেশাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন না। সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন ৪৪ কিঃমিঃ রাস্তায় হকারী করার কষ্টের কথা উপলব্ধি করে আমার বড় ছেলে ২০১৮ সালে আমাকে একটি মটর সাইকেল কিনে দেয়। কিছুদিন মটর সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা সরবরাহের কাজ করেছি। এখন আবারও সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা সরবরাহের কাজ করছি। কারণ মটরসাইকেলের চেয়ে বাই সাইকেল চালাতে আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি।

বর্তমানে মাসুদ রানার বয়স ৫২ বছর। ৩ ছেলে মেয়ের গর্বিত পিতা। বড় ছেলে আরাফাত হোসেন নয়ন পড়াশুনা করেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। ছোট ছেলে ইসমাইল হোসেন চয়ন সেনহাটী জাকারিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। একমাত্র মেয়ের নাম মনিয়া।

খুলনা গেজেট/এ হোসেন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!