ঢাকার রাজপথে চলমান ছাত্র আন্দোলন, আহতদের দীর্ঘশ্বাস এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক নিরলস কর্মী মো. মাস্উদুজ্জামান। বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার আপসহীন লড়াই এবং আহতদের সেবায় তার নিবেদন তাকে শুধু ছাত্র সমাজের নয় বরং সমগ্র মানবতার এক উজ্জ্বল বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য সেল সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন সাতক্ষীরার এই গর্বিত সন্তান।
২০২৪ সালের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, আহত হয়ে পড়ে থাকা সহযোদ্ধাদের দেখে পিছিয়ে যাননি মাস্উদুজ্জামান। আহতদের চিকিৎসা দিতে তিনি ছুটে গেছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। ব্যান্ডেজ বাঁধা, ওষুধ সংগ্রহ, রক্তের ব্যবস্থা করা, সবই করেছেন দিন-রাত এক করে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের সন্তান মাস্উদুজ্জামান ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। বুধহাটা বি বি এম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং নটরডেম কলেজ, ঢাকা থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
তার বাবা মো. আব্দুল মান্নান ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক। মা শরিফা পারভীন শহীদ কাজল স্মৃতি পশ্চিম জোড়দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
মাস্উদুজ্জামান ঢাকা থেকে আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ১২ জুলাই সাতক্ষীরায় আন্দোলন শুরুর রূপরেখা তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আন্দোলনের পর আহতদের তালিকা প্রস্তুত করা, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং শহীদ পরিবারের সহায়তায় কাজ করতে থাকেন তিনি।
মাস্উদুজ্জামানের ভাষায়, ’আমি চিকিৎসক নই কিন্তু একজন মানবিক মানুষ হিসেবে আহতদের পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব। তাদের চোখের জল, তাদের যন্ত্রণা আমাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। যতদিন এই বৈষম্য থাকবে, ততদিন আমরা রাস্তায় থাকব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, “মাস্উদুজ্জামান শুধু একজন আন্দোলনকারী নন, তিনি একজন মানবতার যোদ্ধা। তার নেতৃত্বে আহতদের চিকিৎসা এবং সহায়তা কার্যক্রম আরও সুসংগঠিত হবে। সাতক্ষীরার গর্ব তিনি।
তিনি আরও বলেন, মাস্উদুজ্জামান শুধু সাতক্ষীরার নয়, গোটা দেশের এক সাহসী কণ্ঠস্বর। যিনি বিশ্বাস করেন মানবতা কোনো সংজ্ঞায়িত গণ্ডিতে আটকে থাকে না।
খুলনা গেজেট/এনএম