প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে নতুন ভোগান্তিতে পড়েছেন বিদ্যুতের গ্রাহকরা। চলতি মাসে বিদ্যুতের টোকেন ডিজিট আসছে ২০০ থেকে ২৪০টি। এতোদিন ২০ ডিজিটের নম্বর দিয়ে রিচার্জ করতেন গ্রাহকরা। মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে ২৪০টি ডিজিট চাপতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিদ্যুতের গ্রাহকরা। অনেকে ভুল করছেন, এতে মিটার লক হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
গ্রাহকরা জানান, ইতোমধ্যে ২০২০ সালে যখন বিদ্যুতের দাম বেড়েছিল, তখনও এ সমস্যা হয়েছিল। সবশেষ চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম ফের বাড়ানো হয়। এরপর থেকে সমস্যাটা আবার সামনে আসে। বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সার্ভারে আপডেট করতে গিয়ে এ সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, খুলনাসহ দক্ষিণের ২১জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ (ওজোপাডিকো) অন্যান্য সংস্থার টাকা রিচার্জ করতে ২০০ ডিজিট রিচার্জ করতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের রিচার্জ চাপতে হচ্ছে আরও ৪০ ডিজিট বেশি। অর্থ্যাৎ ২৪০ ডিজিট।
নগরীর বসুপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ করতে গিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কার্ডে টাকা ভরার পর ফোনে টোকেন নম্বর আসে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ২০ ডিজিটের ১০টা টোকেন এসেছে। অর্থাৎ ২০০টি সংখ্যা। আমাকে বাধ্য হয়েই সবগুলো সংখ্যা সঠিকভাবে বসিয়ে রিচার্জ কমপ্লিট করতে হয়েছে। যা চরম একটা ভোগান্তি।
একই ভোগান্তির কথা জানালেন নগরীর বটিয়াঘাটায় বসবাসরত একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত। তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করলে আসতো ২০ ডিজিট, আর এখন আসছে ২৪০ ডিজিটি! এতগুলো সংখ্যা চেপে রিচার্জ করা একটা ভোগান্তির বিষয়। বারবার ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, জরুরী মুহূর্তে যদি এমন সংখ্যা চাপতে হয়, তাহলে ডিজিটালাইজড করে লাভ কী।
ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান দিতে পারেনি। টেকনিক্যাল ইস্যুতে এমনটা হয়ে থাকে বলে জানানো হয়। অগত্যা ২৪০ শব্দ চেপেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন গ্রাহকরা।
এদিকে চলতি মাসে দাম বাড়ানোর পর গত ১৮ জানুয়ারি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে প্রথমবার রিচার্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাড়তি লাইন আসবে। যা বিগত সময়েও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পর এসেছিল।
রিচার্জের বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে গ্রাহকদের ওজোপাডিকোর কল সেন্টারে (১৬১৭৭) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রি-পেইড মিটার বিষয়ক নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম বলেন, যখন বিদ্যুতের ট্যারিফ বা মূল্য চেঞ্জ হয় তখন টোকেনের এই সমস্যাটা হয়। সার্ভার থেকে মিটারে তথ্য জমা দিতে গেলে এতোগুলো টোকেন আসে। এই প্রবণতা আবাসিক গ্রাহকপর্যায়েই বেশি। কারণ এই খাতে স্লাবের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, আবাসিক গ্রাহক শ্রেণির ছয়টি ধাপ আছে। (০-৫০ ইউনিট, ০-৭৫ ইউনিট, ৭৬-২০০ ইউনিট)। এই সবগুলো স্লাব বা ধাপের জন্য দশ-বারোটা টোকেন আসে। এটা একটা সফটওয়্যারগত ইস্যু। অনেক গ্রাহক আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। অনেকে বিষয়টা বোঝেন, অনেকে বুঝতে চান না।
আমরা ইতোমধ্যেই সফটওয়্যারগত এই সমস্যাটা ঠিক করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যা প্লানিং কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পল্লী বিদ্যুৎসহ অন্যান্য যেসব সংস্থা যেমন ডেসকো, ডিপিডিসি, নেসকো, বিপিডিবি ইত্যাদির প্রিপেইড মিটার রিচার্জ সিস্টেমের এসব ভোগান্তির নিরসন হবে। এমনটাই অভিমত ঐ প্রকৌশলীর।