নস্ট্রাদামুসের নাম সকলেই কম-বেশি শুনেছেন। আর যাঁরা জানেন না কে এই নস্ট্রাদামুস, তাঁদের বলে রাখি, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎবক্তা হিসেবে মানা হয় ১৬০০ শতকের পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ নস্ট্রাদামুসকে। ১৯৫৫ সালে তিনি মোট ৯৪২ টি ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। যার বেশিরভাগটাই ফলে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
আর আধুনিক বিশ্বের ‘নস্ট্রাদামুস’ বলা হয় বুলগেরীয় নারী ভ্যাঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভাকে। তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উস্মানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান ন্যাসডোনিয়া প্রজাতন্ত্র) স্টোমিকাতে। যদিও তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপুটিতে।
কথিত রয়েছে, ভ্যাঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা ১২ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় এক ভয়ানক ঝড়ে উড়ে যায়। তাকে দুদিন পর খুঁজে পাওয়া গেলে দেখা যায়, তার চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। অন্ধ হয়ে যায় সে। এই ঘটনার পর তিনি দাবি করেন, ওই ঝড়ে যখন তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারাল, তখন কোনও এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা তাঁর মধ্যে ভর করেছিল। তিনি তাঁর দৈবশক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কী ঘটতে চলেছে, তা দেখতে পাচ্ছেন। কেবল তা নয়, তাঁর মধ্যে রয়েছে আরেক বিশেষ ক্ষমতা। তাঁর স্পর্শের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা। এই রহস্যময়ী অন্ধ নারী তারপর থেকেই ‘বাবা ভাঙা’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন।
এখন মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাঁর করা কী কী ভবিষ্যৎবাণী মিলে গেছে? ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে মিলে যায়। এছাড়া তিনি বলে গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান। আশ্চর্যজনকভাবে ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট হন বারাক ওবামা। এছাড়াও তিনি পঞ্চাশের দশকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শীতল অঞ্চলগুলি উষ্ণ হয়ে উঠবে…। এবং আগ্নেয়গিরি জেগে উঠবে। সবকিছু বরফের মতো গলে যাবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে তাঁর ভক্তরা বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে তুলনা করেন।
২০০৪ সালের বক্সিং-ডে অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের তলদেশে এক ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছিল, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল প্রায় ৯.১। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ জলের তলায় চলে যায়। প্রাণ হারায় প্রায় দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার। ভক্তরা এই সুনামিকে বাবা ভাঙার ভবিষ্যদ্বাণীর করা সেই প্রলয়ের সঙ্গে মেলান। তাঁদের দাবি ছিল, এই প্রলয়ের কথায় আগাম বলে গিয়েছিলেন বাবা ভাঙা।
এছাড়া পুতিনের ওপর হামলা, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরল রোগ এশিয়ায় বড় দ্গরনের সুনামি ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন, আগামী বছরগুলি নিয়ে কোনওরকম ভবিষ্যদ্বাণী করেননি বাবা ভাঙা? হ্যাঁ, তিনি গণনা করে বলে গিয়েছেন আগামী বছরগুলিতে কী ঘটতে চলেছে।
বুলগেরিয়ার এই ব্যক্তি আগেই ২০২২ সালের ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। যা ২০২১ সালের শেষের দিকে ফের ভাইরাল হতে শুরু করেছে। বাবা ভাঙা বুলগেরিয়ার এক অন্ধ ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১১ অগাস্ট মৃত্যু হয় বাবা ভাঙার। মৃত্যুর আগে কী কী জানিয়েছিলেন বাবা ভাঙা?
২০২২ সালে আবারো একটি মহামারি হানা দিতে পারে পৃথিবীতে। বরফের নীচে এমন একটি ভাইরাস লুকিয়ে রয়েছে, যার দ্বারা ফের গোটা বিশ্ব জুড়ে হামলা করতে পারে আরও একটি মহামারি।
জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে গোটা পৃথিবী জুড়ে। গোটা পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফেলে ২০২২ সালে পানির সংকট দেখা দিতে পারে প্রকটভাবে।
পঙ্গপাল হানা দিতে পারে ভারতের বিভিন্ন অংশে। পঙ্গপালের হানায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ফসলের ক্ষতি হতে পারে প্রচুর।
২০২২ সালে পৃথিবীতে অ্যালিয়েন হামলা চালাতে পারে বলে নাকি ভবিষ্যতবাণী করেন বাবা ভাঙা। বাবা ভাঙার অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, বুলগেরিয়ার ওই ব্যক্তি কোনোভাবে অ্যালিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন।
২০২২ সালে গোটা বিশ্ব জুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে পারে। অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোথাও বন্যা, কোথাও ভূমিকম্প দেখা দিতে পারে।
২০২২ সালে মানুষের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতি আসক্তি বাড়বে। এমন ভবিষ্যতবাণী করেন বাবা ভাঙা।
এখন দেখা যাক, বুলগেরিয়ার অন্ধ ব্যক্তি বাবা ভাঙা যা বলেছিলেন ২০২২ সাল সম্পর্কে, তা কতদূর সত্যি হয়। তবে ২০২২ সাল যাতে প্রত্যেকের জীবন ভাল সময় নিয়ে আসে, সেই আশাতেই বছর শেষ করছেন মানুষ। লেটেস্টলি।
খুলনা গেজেট/ এস আই