শনির দশা ভর করেছে ভৈরব সেতু’র নির্মাণ কাজে। সেতু সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা। দিঘলিয়া প্রান্তের জমি অধিগ্রহণের ৩ মাসের অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা এবং গাছপালা অপসারণের টেন্ডার আহ্বান হয়নি। ঠিকাদারী কর্তৃপক্ষ বলছে সেতুর কাজে গতি আনার সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ক্ষেত্র প্রস্তুত না হওয়ায় কাজে গতি আনতে পারছি না। ১৮ মাসে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। কাজের এ অগ্রগতি দেখে খুলনাবাসী ক্রমান্বয়ে হতাশ হচ্ছে। সবার একটাই প্রশ্ন ভৈরব সেতু’র নির্মাণ কাজে গতি আসবে কবে?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন না হলেও সরকারি খাস জমির উপর গত বছরের ২৪ মে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ। এরপর একই প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর নির্মাণ শুরু হয় ২৪ নং পিলারের কাজ। সেতুর খুলনা শহরাংশে রেলিগেট প্রান্তে ভৈরব নদীর তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৩ এবং ১৪ নং পিলারের।
আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর ১৫ মাস পর গত ১ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষের নিকট দিঘলিয়া প্রান্তের অধিগ্রহণকৃত ১০ দশমিক ৩৭৬৭ একর জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়। অধিগ্রহণকৃত ভূমির দলিল হস্তান্তরের ২৮ দিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদানের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন।
ভূমি অধিগ্রহণের দলিল হস্তান্তরের ৩ মাসের অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে এখনও স্থাপনা এবং গাছপালা অপসারণের টেন্ডার আহবান করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। একই কারণে বিদ্যুতের খুঁটি এবং তারও অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না।
১৮ মাসে কাজের অগ্রগতি বলতে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ২৪ এবং ২৫ নং পিলারের কিছু অংশ, খুলনা শহরাংশে রেলিগেট প্রান্তের ভৈরব নদীর তীর সংলগ্ন ১৩ নং পিলারের কিছু অংশ দৃশ্যমান এবং একই প্রান্তে ১৪ নং পিলারের পাইল ক্যাপ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলমান। যা সেতুর মোট কাজের ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজের গতি আনায়নের সকল প্রস্তুতি থাকা সত্বেও অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা এবং গাছপালা অপসারিত না হওয়ায় আমরা কাজে গতি আনতে পারছি না। আমরা ইতিমধ্যে স্ব উদ্যোগে বন বিভাগের সহায়তায় সেতুর ২১ নং পিলার এবং A-2 (এবাটমেন্ট-2) নির্মাণের জন্য পয়েন্ট ২ টি প্রস্তুুত করছি। এ দু’টি প্রান্তে দ্রুতই কাজ শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা এবং গাছপালা অপসারণের টেন্ডার আহবানের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সেতুর শহরাংশ রেলিগেট হতে মুহসিন মোড় পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ এখনও সম্পন্ন হয়নি। গত ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় রেলিগেট হতে মুহসিন মোড় পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
সূত্র জানায়, খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মহেশ্বরপাশা মৌজার বাংলাদেশ রেলওয়ে রেকর্ডীয় মালিকানাধীন উক্ত ৭ দশমিক ১১৩৬ একর ভূমি খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তরের জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর একটি প্রস্তাবনা ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এসজেড