৩ ফেব্রুয়ারি শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন। তিন বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বাজার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সাজ সাজ রব। পুরো বাজার ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর প্যানায়। বাদ যায়নি বাজারের পার্শ্ববর্তী সড়কগুলো। বিএল কলেজের সামনে থেকে থানার মোড় পর্যন্ত এবং খুলনা-যশোর মহাসড়কের দৌলতপুর ওভারব্রিজ থেকে মুহসিন মোড় পর্যন্ত ডিভাইডারের উপর, সড়কের দু’পাশে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের বড় বড় প্যানা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার।
প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত অবধি বাজারের অলি গলি, সড়কের পাশ দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে চলছে হ্যান্ড মাইকে প্রচারণা, প্রার্থীর ছবি ও মার্কা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ। কোন কোন প্রার্থীর প্রতীকের ভিতর ভয়েজ ডিভাইস সেট করেও প্রচারণা করতে দেখা যায়।
নির্বাচনের বাকি মাত্র ৪ দিন। শেষ সময়ে প্রার্থীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে এবং বাড়িতে গিয়েও ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচিত হলে সুখে দুখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন।
বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দরা বাজারের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পুনরায় তাদেরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন প্রার্থীরাও বাজারের উন্নয়নে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এবারের নির্বাচনে ১৭ টি পদের বিপরীতে মোট প্রার্থী ৪০ জন। এর মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ সম্পাদক পদে ১০ জন এবং সদস্য পদে ৭ জন ভোটে নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। বাজারের মাছ পট্টিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫১৫ জন। ১৭ টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৪০ জন। গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোট প্রার্থী ৬ জন। সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থী। বর্তমান সভাপতি শেখ কামাল হোসেন, সাবেক নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব শেখ আসলাম ও শেখ কামাল হোসেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নোঃ নান্নু মোড়ল। বাকি দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন এম এম জসিম ও আসাদ বন্দ।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ মুশাররফ হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, খুলনা জেলার ভিতর দৌলতপুর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার। তিন বছর পর পর বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগমাী ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, ত্রুটিহীন এবং বাজারের ব্যবসায়ীসহ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব।
বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি এবং প্রত্যাশা নির্বাচনের পূর্বে প্রার্থীরা যেমনিভাবে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন নির্বাচিত হওয়ার পরও যেন এ ধারা অব্যাহত থাকে।
বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (মুদি দোকানদার) আবুল কালাম আজাদ খুলনা গেজেটকে বলেন, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সবাই ভালো। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছে, আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের কাছে আসতেছে। এতে আমরা খুশি। তাদের কাছে আমাদের দাবি এবং প্রত্যাশা নির্বাচিত হওয়ার পরেও যেন এই ধারাবাহিকতা থাকে।
ওষুধ ব্যবসায়ী বলাকা ফার্মেসীর শরাফাত হোসেন বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আমরা বাজারের ব্যবসায়ীরা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছি। যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা বাজারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থাকবেন সাধারণ ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনার জন্য। চাঁদাবাজমুক্ত ব্যবসায়ী সমাজ গঠনে যারা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বাজারের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং উন্নয়নে যারা কাজ করবে। দুষ্টু চরিত্রের কোন নেতৃত্ব আমরা চাই না। আমরা চাই সৎ, যোগ্য ব্যবসায়ী বান্ধব নেতৃত্ব।
বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম বলেন, প্রার্থীদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা নির্বাচিত হওয়ার পর তারা যেন বৈষম্য সৃষ্টি না করে। বাজারের ছোট বড় ব্যবসায়ীদের সমান দৃষ্টিতে দেখে। তাদের সুবিধা অসুবিধা, সুখ দুঃখের সাথী হয়ে বিপদে আপদে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকে।
সামিম ফল ঘরের স্বত্বাধিকারী মোঃ বাবু বলেন, যারা বাজারের উন্নয়ন করবে, ভালো কাজ করবে, ব্যবসায়ীদের সুখ দুঃখের সাথী হিসেবে থাকবে, বিপদ আপদে পাশে থাকবে। আমরা এই ধরনের নেতৃত্ব চাই।
কালাম হার্ডওয়ারের স্বত্বাধিকারী মোঃ সেলিম বলেন, বাজারের দোকানদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, চুরি-ডাকাতি এগুলো রোধ করা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা, মাদক মুক্ত বাজার এমন নেতৃত্বই ৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা।
খুলনা গেজেট/এনএম