ব্রাজিলে আক্ষরিক অর্থেই শরীরে লেজ নিয়ে জন্ম নিয়েছে একটি শিশু। লেজটি লম্বায় ১২ সেন্টিমিটার। এভাবে লেজ নিয়ে মানবশিশুর জন্ম একেবারেই বিরল ঘটনা। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সাময়িকীতে এখন পর্যন্ত ৪০টি এমন ঘটনার খোঁজ পাওয়া যায়। পেডিয়াট্রিক কেস রিপোর্টস নামে একটি জার্নালে সর্বশেষ ঘটনাটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জার্নালে শিশুটির কোনো পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, শিশুটি অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। তবে এর জন্য শিশুটির শরীরে কোনো জটিলতা ছিল না।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুটির শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ পাওয়া যায়। শিশুটির শরীরে বাঁ পাশে মাজার নিচ থেকে অবিকল লেজের মতো কিছু একটা নেমে গেছে যেটা লম্বায় ১২ সেন্টিমিটার। আর ওই অংশটির সাথে জোড়া লাগানো আছে গোলাকার আরেকটি অংশ, যার সর্বোচ্চ ব্যাস ৪ সেন্টিমিটার। আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করে শিশুটির শরীরে অন্য কোনো সমস্যা বা ব্যতিক্রমী কিছু আর পাওয়া যায়নি।
মানবশরীরে কখনও যদি লেজের মতো কোনো অঙ্গ দেখা যায়, তবে সেটিকে দুভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এর একটিকে বলা হয় ট্রু টেল আর অন্যটি হলো সিউডো টেল।
এরমধ্যে সিউডো টেলটা হলো মূলত শরীরের একটি বর্ধিত অংশ যেটা মূলত অ্যাডিপোজ ও কার্টিলাগিনাউস টিস্যু দিয়ে তৈরি, আর এ ধরনের লেজে হাড়ের কিছু উপাদান বিদ্যমান থাকে। আর ট্রু হিউম্যান টেল যেটাকে বলা হয়, সেটা একেবারেই বিরল, এখন পর্যন্ত ৪০টি শিশুর ক্ষেত্রে হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সত্যিকারের লেজ বলতে আসলে ভ্রুণের লেজের কথা বলা হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় যেটা শিশুর জন্মের আগ পর্যন্ত থাকে। সাধারণত ভ্রুণের বয়স যখন চার সপ্তাহ হয়, তখন ভ্রুণে ছোট্ট একটি লেজ তৈরি হয়। তবে ভ্রুণের বয়স যখন ১২ সপ্তাহ মতো হয় তখন শ্বেত রক্ত কণিকায এই লেজটা শোষিত হয়।
বিরল কিছু ক্ষেত্রে, এ শিশুটার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, শ্বেত রক্ত কণিকায় লেজটার কিছু হয় না এবং ভ্রুণ পরিণত হতে থাকলেও লেজটা তার সঙ্গে থেকেই যায়।
সাধারণত ভ্রুণের বয়স যখন চার সপ্তাহ হয়, তখন ভ্রুণে ছোট্ট একটি লেজ তৈরি হয়। তবে চিকিৎসকরা দ্বিতীয় কেনো জটিলতা ছাড়াই অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে শিশুটির শরীর থেকে লেজটি ফেলে দিয়েছেন। এই ধরনের লেজে কখনও কখনও মাসল টিস্যুও থাকে।
ওই অস্ত্রপাচার শুরুর আগে শিশুটির শরীরে সম্ভাব্য অন্য কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখেন চিকিৎসকরা। ট্রু টেল যাদের শরীরে থাকে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের মেরুদণ্ডে অন্য জটিলতা থাকে। তবে এ শিশুটির আর কোনো জটিলতা পাননি চিকিৎসকরা।
বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সাময়িকীতে এখন পর্যন্ত ৪০টি এমন ঘটনার খোঁজ পাওয়া যায়। কেন শিশুটি লেজ নিয়ে জন্ম নিয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি চিকিৎসকরা। তবে তারা দুটি বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন, তার একটি হলো- গর্ভাবস্থায় শিশুটির মা মূত্রনালীর সংক্রমণের জন্য প্রথম প্রজন্মের সেফালসপোরিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেছিলেন। এছাড়া গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনি তিনি ১০টি করে সিগারেট খেয়েছেন।
লেজটি ফেলে দেওয়ার পর শিশুটির শরীরে অন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি এবং সে পুরোপুরি সুস্থ আছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই