লাভড দিস শট! ১৭তম ওভারে ফজলহক ফারুকির তৃতীয় বলে লেগ-অনে সজোরে উড়িয়ে মারেন তাওহীদ হৃদয়। এরপরই ধারাভাষ্যকারের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশি দর্শকদের সেই মনের কথাটি। আগের ওভারেই স্লগ সুইপে মারা শামীম পাটোয়ারীর সহজ ক্যাচ ছেড়েছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। সেই ক্যাচ মিস যেন বাংলাদেশের জয়েরই ইঙ্গিত! কিন্তু শেষ ওভারে করিম জানাতের হ্যাটট্রিক। সহজ ম্যাচটি হয়ে পড়ল পাহাড়সম কঠিন। সেই পাহাড় ভাঙল শরীফুলের হাঁকানো চারে। টাইগাররাও নাটকীয় ম্যাচটি জিতল ২ উইকেটে। আর এই রোমাঞ্চকর জয়ের মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান যখন ফিরে গেলেন বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ৬৪। তখনও বাংলাদেশকে প্রতি ওভারে নয়ের বেশি রান করতে হতো। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৭৩ রান। তাতেই জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। শেষ দিকে গিয়ে শামীম ৩৩ রান করে ফিরে গেলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে টাইগারদের যখন ৬ রান দরকার তখন প্রথম বলেই চার মারেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
পরের তিন বলে মিরাজ, তাসকিন আহমেদ এবং নাসুম আহমেদকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক তুলে নেন করিম জানাত। তাতে শেষ দুই বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন হয় ২ রান। পঞ্চম বলে চার মেরে বাংলাদেশের ২ উইকেটে জয় নিশ্চিত করেন শরিফুল ইসলাম। শামীমের ৩৩ রানের সঙ্গে হৃদয়ের অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসে প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জয়ের জন্য ১৫৫ রান তাড়া করতে নেমে ফজলহক ফারুকির অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে চার মেরে রানের খাতা খুলেন রনি তালুকদার। দারুণ শটে ভালো কিছুর আভাসই দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডানহাতি এই ওপেনার। তবে রনিকে এক চারের বেশি মারতে দেননি ফারুকি। বাঁহাতি এই পেসারের ব্যাক লেংথ ডেলিভারিতে ভেতরে ঢোকার সময় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান রনি।
এরপর বাংলাদেশকে টানার চেষ্টা করে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন। আগের ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করে ছক্কা মারেন শান্ত। তবে পরের ওভারে অদ্ভুতভাবে আউট হলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। মুজিব উর রহমানের বলে খানিকটা জায়গা বানিয়ে স্লগ সুইপ করতে চেয়েছিলেন, তবে বলের লাইন মিস করে বিপাকে পড়লেন শান্ত।
মিস করা বলটি তার পেটে লেগে তা শেষ পর্যন্ত স্টাম্পে আঘাত হানল। তাতে অদ্ভুতভাবে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ১৪ রান করা এই ব্যাটার। ভালো শুরুর আভাস দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। ওমরজাইয়ের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। তবে শটে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন মিড অফে থাকা রশিদ খানের হাতে।
কিছুক্ষণ পরই হানা দেয় বৃষ্টি। যদিও সেটা ১৭ মিনিটের বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরুর পর আফগানিস্তানের বোলারদের আক্রমণ করতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন সাকিব। ফরিদ আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে থাকা করিম জানাতের হাতে ক্যাচ দেন ১৯ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ক।
সাকিবের বিদায়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনেছেন হৃদয় ও শামীম। তারা দুজনে মিলে যোগ গুরুত্বপূর্ণ ৭৩ রান। রশিদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরে যান ৩৩ রান করা শামীম। তবে হৃদয় ও মিরাজের ব্যাটে জয়ের পথেই ছিল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে রোমাঞ্চ জাগান জানাত। তবে চার মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শরিফুল।
এর আগে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে অধিনায়ক সাকিব প্রথম ওভারেই বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদের হাতে। এই স্পিনার প্রথম ওভারে খরচা করেন মাত্র ২ রান। বাংলাদেশ উইকেটের দেখা পেতে পারত দ্বিতীয় ওভারেই তাসকিন আহমেদের করা লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কভারে পাঠিয়েছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
দৌড়ে গিয়ে বল প্রায় লুফে নিয়েছিলেন রনি তালুকদার। যদিও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি। ফলে জীবন পান গুরবাজ। অবশ্য পরের ওভারেই নাসুমের বলে স্কয়ার লেগে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন জাজাই। এরপর চতুর্থ ওভারে তাসকিনের করা স্লোয়ার বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন গুরবাজ।
এই আফগান ব্যাটারের ব্যাট থেকে থেকে এসেছে ১১ বলে ১৬ রান। নতুন ব্যাটার ইব্রাহীম জাদরানকে দ্রুত ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। এই টাইগার পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি করা বলটি একটু বেশি বাউন্স হয়েছিল। সেটাই কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়েছেন জাদরান। এরপর বোলিং আক্রমণে এসেই ৩ রান করা করিম জানাতকে আউট করেন টাইগার অধিনায়ক।
সাকিবের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ছিলেন জানাত। তবে ব্যাটে-বলে ঠিক মতো করতে পারেননি। বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় মিড অফে। লং অন থেকে দৌড়ে এসে সেই ক্যাচ নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আর তাতেই শেষ হয় জানাতের ৩ রানের ইনিংস।
মাত্র ৫২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে মোহাম্মদ নবি ও নাজিবউল্লাহ জাদরান মিলে আফগানিস্তানের হাল ধরেন। এই দুজনে যোগ করেন ৩৫ রান। মিরাজের করা শর্ট ডেলিভারিতে ২৩ বলে ২৩ রান করা নাজিবউল্লাহ কাট করতে গিয়েছিলেন।
যদিও তা ঠিক মতো হয়নি। উল্টো ব্যাটের নিচের কানা ছুঁয়ে ঊরুর সামনের অংশে লেগে বল যায় লিটনের হাতে উইকেটের পেছনে। লিটনও ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক দৃষ্টিনন্দন ক্যাচ নেন। এরপর বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ঝড় তুলে দেন মোহাম্মদ নবি ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
এর মধ্যে সাকিবের করা ১৯তম ওভারে টানা তিন বলে ছকা হাঁকান আজমতউল্লাহ। অবশ্য ওভারের শেষ বলে সাকিবকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তাসকিনের হাতে। শেষ ওভারে ৩ রান করা রশিদ খানকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে শেষ পর্যন্ত নবি ৫৪ রান করে অপরাজিত থেকে আফগানিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন।
খুলনা গেজেট /এমএম