খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার রূপসায় কোস্ট গার্ডের অভিযানে বোমা, অস্ত্র-গুলি ও মাদকসহ ডাকাত দলের ৪ সদস্য আটক
  নড়াইলের তুলারামপুরে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
  চট্টগ্রামে জুস কারখানায় আগুন, এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ এনেছে ফায়ার সার্ভিস
  সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ গ্রেপ্তার

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ হিজবুত তাহরীরের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক 

খুলনা মহানগরী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে কেএমপির হেডকোয়ার্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন হিজবুত তাহরীর খুলনা অঞ্চলের প্রধান আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি (৩৬), সদস্য মো. শাকিল আহম্মেদ (২৬), রিজভী আজিম খান (২৭) ও মেহেদী হোসেন সালিত (২৪)।

পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিম শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর হরিণটানা থানাধীন খানজাহান নগর এলাকা থেকে হিজবুত তাহরীর খুলনা অঞ্চলের প্রধানসহ চারজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল, ২টি পেনড্রাইভ, একটি এটিএম কার্ড এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্ট বইয়ের ১০টি প্রিন্ট কপি পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। মূলত তারা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সংবিধান মানে না। এ লক্ষ্যে তারা সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী পর্যায়ে বিশেষত স্কুলকলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সমাজের মেধাবী মানুষদের উগ্রবাদী আদর্শে প্রভাবিত করে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়ে শতভাগ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।

এদের মধ্যে মো. আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকি মূলত খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম প্রচার প্রসারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নিজ বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগ থেকে অর্নাস সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে যান। এরআগে ২০১১ ও ২০১৩ সালে ডিএমপির গুলশান থানা এবং ২০১৫ সালে ডিএমপির ভাটারা থানায় গ্রেপ্তার হয়ে ৩, ৭ ও ১৩ মাস কারাভোগ করেছেন। তিনি তার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে জুম মিটিং ও গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ এবং রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা ১ম ফেজে রোজভেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থেকে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

সংগঠনের সদস্য মোঃ শাকিল আহম্মেদের বাড়ি নড়াইল জেলায়। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। গত ৬/৭ মাস যাবৎ তিনি হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি নড়াইল সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে অর্নাস ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন।

মোঃ রিজভী আজিম খানের বাড়ি পটুয়াখালী। গত ৬/৭ মাস ধরে তিনি হিযবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ (বিজ্ঞান বিভাগ) হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ হতে অনার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি শিক্ষক হিসেবে সোনাডাঙ্গা প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কর্মরত আছেন।

এছাড়া মেহেদী হোসেন সালিতের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বিগত ৬/৭ মাস যাবৎ তিনি হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। তিনি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন।

কেএমপি কমিশনার বলেন, সংগঠনের খুলনা অঞ্চলের প্রধান মো. আনিসুর রহমান রুহুল আমিন রকির সঙ্গে ৬/৭ মাস আগে মো. শাকিল আহম্মেদ, মো. রিজভী আজিম খান ও মেহেদী হোসেন সালিতের পরিচয় হয়। এরপর থেকেই তার নির্দেশনায় তারা জুমসহ বিভিন্ন অ্যাপস ও প্রটেকটিভ টেক্সটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর জন্য সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গিবাদের দীক্ষা প্রদান চালিয়ে যাচ্ছিল। পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটকের পর জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশ্লেষণ ও আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে হরিণটানা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গি, জুয়া, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার রয়েছে। অপরাধ মুক্ত সমাজ গঠনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!