হারানো যৌবন ফিরে পেতে হলে একটি পুরুষাঙ্গ আনতে হবে বলে জানান কবিরাজ আব্দুল বারেক। এ কারণে বাঘারপাড়ায় শ্রমিক নকিম উদ্দীনের পুরুষাঙ্গ কেটে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশের হাতে আটক লিটন মালিথা ও করিরাজ বারেক এ তথ্য জানিয়েছে। যশোরের বাঘারপাড়ায় নকিম উদ্দীন (৬০) নামে এক কৃষককে হত্যার ছয়দিন পর ক্লুলেস এ হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে যশোর পুলিশ অফিসে এক ব্রিফিংয়ে ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রূপন কুমার সরকার জানান, নকিম হত্যার পর দু’দিন অভিযান চালিয়ে তারা লিটন ও কবিরাজ বারেককে আটক করে। প্রথমে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা থেকে কবিরাজ আব্দুল বারেক (৬২) ও পরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী থেকে লিটন মালিথা (৪০) কে আটক করা হয়। এ সময় আটক লিটন মালিথার কাছ থেকে একটি পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও একটি চোখ উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, আটক আব্দুল বারেক চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি পেশায় কবিরাজ। এছাড়া লিটন মালিথা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোহাম্মদ জুমা গ্রামের হানিফ মালিথার ছেলে। আটক লিটন দীর্ঘদিন যাবৎ যৌনরোগে ভূগছিলেন। পরে স্থানীয় কবিরাজ আব্দুল বারেকের শরণাপন্ন হয় লিটন। এ কবিরাজ লিটনকে যে কোন মানুষের একটি পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও একটি চোখ উপড়ে নিয়ে আসতে বলেন। তাহলে তিনি হারানো যৌবন ফিরে পাবে বলে জানান। সেই থেকে লিটন বিভিন্ন জায়গায় মানুষের লিঙ্গ কাটার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ধানকাটা শ্রমিক সেজে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে কাজ নেয়। সুযোগ বুঝে কবিরাজের দেয়া মহা ওষুধের উপকরণ যোগাড় করতে নকিম উদ্দীন নামে ওই শ্রমিককে খুন করে।
এরপরে তার পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও একটি চোখ উপড়ে নিয়ে লিটন পালিয়ে যায় মানিকগঞ্জে। ঘটনাটি উন্নত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মঙ্গলবার ও বুধবার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে যশোর ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশ স্থান শনাক্ত করে যোগাযোগ করে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লবের সাথে।
তিনি জানান, লিটন মালিথা গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ধানকাটার শ্রমিক সেজে আসেন। সেই শ্রমিকের হাট থেকে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী গ্রামের কৃষক জিতু তাকে ধানকাটার কাজে বাড়িতে নিয়ে যান। অবস্থান শনাক্ত করে বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী এলাকা থেকে ধান কাটারত ঘিওর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করে যশোর ডিবি পুলিশ। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রামে তার ঘর থেকে একটি পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও একটি চোখ উদ্ধার করা হয়। আটকের পর লিটন পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার বর্ণনা দেয়। বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে আটককৃতদের উপস্থিতিতে এ তথ্য জানান ডিবি ইনচার্জ রূপন কুমার সরকার। পরে দুপুরে তাদেরকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে উপজেলার ছাতিয়ানতলা বাজার থেকে ধান কাটার জন্য কৃষাণ হিসেবে নকিম উদ্দীনসহ তিনজনকে বাড়িতে নিয়ে যান বাঘারপাড়ার পাইকপাড়া গ্রামের মৃত ইবাদ মোল্লার ছেলে বেনজির আহম্মেদ (৪২)। এরমধ্যে গত রবিবার বিকালে পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে এক শ্রমিক চলে যায়। বাকি দু’জন আটক লিটন মালিথা ও নিহত নকিম উদ্দীন রাতে খাবার খেয়ে এক কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন। পরদিন সকালে বাড়ির মালিক বেনজির আহম্মেদ কৃষাণদের ডাক দিলে বাইর থেকে দরজা খোলা দেখতে পান। এসময় তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেন জখম অবস্থায় কৃষাণ নকিম উদ্দীনের লাশ খাটের উপর পড়ে আছে। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় ৩১ মে হত্যা মামলা হয়। আলোচিত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে যশোর ডিবি পুলিশ। এরপর তারা ক্লুলেস এ হত্যা রহস্য উন্মোচন করে। এ কাজে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন এসআই মফিজুর রহমান।
খুলনা গেজেট/ এস আই