খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ মে, ২০২৪

Breaking News

হজ্ব পালনের সহজ পদ্ধতি (পর্বঃ ০১)

হাফেজ মাও. মুফতি জুবায়ের হাসান

আলহামদুলিল্লাহ্‌, হজ্বের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে । প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আল্লাহর অনেক সৌভাগ্যবান বান্দা বান্দি হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভূমি মক্কায় গমন করবেন। অল্প কিছুদিন বাদে হজ্বের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। হজ্ব যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। তাই সকলে যেন সঠিক ভাবে মাসআলা জেনে হজ্বের সকল কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে হজ্ব সম্পর্কে কিছু বিধিবিধান একেবারে সংক্ষেপে সহজভাবে লিপিবদ্ধ করছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মেহনত কবুল ফরমান!

হজ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত:
আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে রামাযানের প্রত্যাগমনের পর পরই শুরু হয়ে যায় হজ্ব নামক ইবাদতের ভূমিকা।
হাদিস শরিফে এসেছে, হজ্বের মাস ৩টি- শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ্ব। ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হল হজ্বে বায়তুল্লাহ। ইমান, নামাজ, জাকাত ও রোযার পরই হজ্বের অবস্থান। হজ্ব মূলত শারীরিক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর হজ্ব পালন করা ফরজ। অর্থাৎ হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব আদায় করা ফরজ। হজ্ব প্রত্যেক মুসলমানের উপর সারা জীবনে একবারই ফরজ হয়। একবার ফরজ হজ্ব আদায়ের পর পরবর্তী হজ্বগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।

এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-
يا أيها الناس! إن الله كتب عليكم الحج، فحجوا، فقال رجل : أكل عام يا رسول الله ؟ فكست حتى قالها ثلاثا، ثم قال : لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم
হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরজ হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।
-সহিহ মুসলিম, হাদিস-১৩৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১০৬০৭; সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস-৩৭০৪; সুনানে নাসায়ি ৫/১১০
হজরত ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত অনুরূপ হাদিসে আরো বলা হয়েছে, হজ্ব (ফরজ) হল একবার, এরপরে যে অতিরিক্ত আদায় করবে তা নফল হিসেবে গণ্য।
-মুসনাদে আহমদ, হাদিস-২৩০৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১৭২১

হজ্ব যেহেতু একবারই ফরজ তাই যার উপর হজ্ব ফরজ হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছর হজ্ব আদায় করে, তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ্বের বিধানের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্ব ফরজ হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল ফরজ হজ্ব আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্বকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا ، ومن كفر فأن الله غنى عن العلمين
অর্থঃ মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত-৯৭
তাছাড়া যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তাই হজ্ব ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে। এজন্যই হাদিস শরিফে হজ্ব ফরজ হওয়া মাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে।
হজরত ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুলে কারিম ﷺ ইরশাদ করেছেন-
من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة
যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ যেকোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস-২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১৭৩২

অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন-
تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له
ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।
-মুসনাদে আহমদ, হাদিস-২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকি ৪/৩৪০
উপরন্তু একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা যে স্বচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি অতি সত্ত্বর হজ্ব আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন।

আবু সাইদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন-
يقول الله عز وجل : إن عبدا صححت له جسمه، و وسعت عليه في المعيشة تمضي عليه خمسة أعوام لا يفد إلى لمحروم
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। -সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস, ৩৬৯৫
শুধু তাই নয়, একসময় বায়তুল্লাহ উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষ হজ্ব করতে পারবে না এই আশঙ্কার কারণেও আল্লাহর রাসুল উম্মতকে তাড়াতাড়ি হজ্ব করার হুকুম করেছেন।

ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
استمتعوا بهذا البيت فقد هدم مرتين ويرفع في الثالثة
তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে।
-সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস-২৫০৬; সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস-৬৭১৮
হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ বিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদিস শরিফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-
من أطاق الحج فلم يحج فسواء علیہ مات يهوديا أو نصرانيا
যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।
-তাফসিরে ইবনে কাসির ১/৫৭৮

তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করছে না। তারা তাদের উপর কর আরোপ করবে। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়। -প্রাগুক্ত
যারা হজ্ব-উমরা না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করে ইসলাম তা কখনো অনুমোদন করে না। ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, নবি কারিম ﷺ ইরশাদ করেছেন-
لا صرورة في الإسلام
ইসলামে বৈরাগ্য নেই। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্বের ক্ষেত্রে কোনো বৈরাগ্য নেই। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস-৩১১৩, ৩১১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-১৭২৯

ইকরামা রাহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, সারুরা কী? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হজ্ব-উমরাহ কিছুই করে না অথবা যে ব্যক্তি কুরবানি করে না। -শরহু মুশকিলুল আছার ২/২১৫-১৬

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন, জাহেলি যুগে যখন কোনো ব্যক্তি হজ্ব করত না তখন তারা বলত, সে সারুরা (বৈরাগী)। তখন আল্লাহর নবি ﷺ বলেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই।

যারা হজ্বের সফরের সৌভাগ্য লাভ করেন তারা যেন আল্লাহর মেহমান। তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহববতের অনুভূতি নিয়ে সেখানে অবস্থান করা। বায়তুল্লাহ ও আল্লাহর অন্যান্য শিআর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। দ্বন্দ-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ এবং অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে সর্বাত্মকভাবে দূরে থাকা। কুরআন-হাদিসে এ সম্পর্কে বিশেষ হুকুম নাযিল হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
الحج اشهر معلومات فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج، وما تفعلوا من خير يعلمہ اللہ
অর্থ- হজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের উপর হজ্ব অবধারিত করে নেয় সে হজ্বের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা জানেন। -সুরা বাকারা, আয়াত-১৯৭

উক্ত আয়াতে তিনটি বিষয় থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
০১. ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা। এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তেজনামূলক কথা বলাও নিষিদ্ধ।
০২. কোনো ধরনের গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
ইহরাম অবস্থার বিশেষ গুনাহ যেমন শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শিকার করা, শরীরে উকুন মারা থেকে যেরূপ বিরত থাকবে তেমনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যেমন অন্যকে কষ্ট দেওয়া, কু-দৃষ্টি ও গিবত শেকায়েত থেকেও বিরত থাকবে।
০৩. ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
এ ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা ও ঝগড়া বিবাদমুক্ত হজ্বকেই হাদিস শরিফে হজ্বে মাবরূর বা মকবুল হজ্ব বলা হয়েছে এবং এর বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা উল্লেখিত হয়েছে।
সুতরাং হজ্ব এমনই একটি মহান ইবাদত; যা হজ্ব আদায়কারীর পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয় এবং তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দেয়।

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবি করিম ﷺ কে বলতে শুনেছি,
من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه
যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। -সহিহ বুখারি, হাদিস-১৫২১
জাবির রা. হতে বর্ণিত, নবি করিম ﷺ ইরশাদ করেছেন-
الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، قيل وما بره؟ قال إطعام الطعام وطيب الكلام
হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। জিজ্ঞাসা করা হল, হজ্বের সদাচার কী? তিনি বললেন, খানা খাওয়ানো এবং উত্তম কথা বলা (অর্থাৎ অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগ করা।) -সহিহ বুখারি, হাদিস-১৬৫০

অতএব, সহিহ পদ্ধতি অনুযায়ী হজ্ব সম্পাদনের লক্ষ্যে একেবারে সংক্ষেপে সহজ ও সাবলীল ভাষায় হজ্বের মৌলিক মাসআলাগুলো মুস্তাহাব তরতিব অনুযায়ী নিম্নে উল্লেখ করা হল-

হজ্বের প্রকারভেদ
হজ্ব মোট ০২ (দুই) প্রকারঃ-
১. হজ্বে আকবার ২. হজ্বে আসগর তথা উমরাহ

হজ্বে আকবার ০৩ (তিন) প্রকারঃ-
১. হজ্বে কিরান। কিরান বলা হয়, মিকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম বেঁধে একই ইহরাম দ্বারা হজ্ব এবং উমরাহ উভয়টা সম্পন্ন করা। ফজিলতের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোত্তম।
২. হজ্বে তামাত্তু। তামাত্তু বলা হয়, ভিন্ন ভিন্ন ইহরামের দ্বারা আলাদা ভাবে হজ্ব এবং উমরাহ সম্পন্ন করা। (অর্থাৎ হজ্বের মাস সমূহ তথা শাওয়াল, জিলক্বদ, এবং জিলহজ্ব এর যেকোন সময় মিকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম বেঁধে উমরাহ করা এবং ৮ই জিলহজ্ব হজ্বের সময় নতুনভাবে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করা।) ফজিলতের ক্ষেত্রে এটা মধ্যম পর্যায়ের।
৩ হজ্বে ইফরাদ। ইফরাদ বলা হয়, মিকাত অতিক্রমের পূর্বে ইহরাম বেঁধে শুধুমাত্র হজ্ব সম্পন্ন করা। ফজিলতের ক্ষেত্রে এটা কিরান ও তামাত্তুর চেয়ে নিম্নগামী।
-সহিহ বুখারী ১/২১২, আল মাবসুত, সারখসি ৪/৪৭৪

হজ্ব-উমরাহ্ এর ফরজ ও ওয়াজিব
উমরাহ্ এর ফরজ ০২ (দুই) টিঃ-
১. সুস্পষ্ট নিয়তের সাথে ইহরাম করা।
২. তাওয়াফে উমরাহ করা।

হজ্ব এর ফরজ ০৩ (তিন) টিঃ-
১. সুস্পষ্ট নিয়তের সাথে ইহরাম করা।
২. আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
৩. তাওয়াফে যিয়ারত সম্পন্ন করা।
-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৫১, ৩২৪

বি. দ্র. শরিয়তের যেকোন হুকুমের মধ্যে যদি ফরজ কাজগুলো ছুটে যায়, তাহলে উক্ত হুকুম আদায়যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না, দ্বিতীয় বার আদায় করতে হয়।

উমরাহ এর ওয়াজিব ০২ (দুই) টিঃ-
১. সাফা-মারওয়া সায়ি করা
২. মাথা মুন্ডানো অথবা চুল খাটো করা।

হজ্বের ওয়াজিব ০৬ (ছয়) টিঃ-
১. মুজদালিফায় অবস্থান করা।
২. নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নির্ধারিত সময়ে জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করা।
৩. কিরান/তামাত্তুকারীদের জন্য ‘দমে শোকর’ অর্থাৎ হজ্বের কুরবানি করা।
৪. মাথা মুন্ডানো অথবা চুল খাটো করা
৫. সাফা-মারওয়া সায়ি করা।
৬. আফাকি ব্যক্তি তথা মক্কার বাহিরের বাসিন্দাদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৬

বি. দ্র. শরিয়তের যেকোন হুকুমের মধ্যে যদি ওয়াজিব কাজগুলো ছুটে যায়, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু কাজের দ্বারা তাঁর ক্ষতিপূরণ সম্ভব। যেমন- নামাজে সিজদায়ে সাহু করতে হয়, হজ্বে দম দিতে হয়।
দম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কুরবানির উপযুক্ত এমন যেকোন পশু হরম এর সীমানায় কুরবানি করে দেওয়া।
( চলবে ….. )

লেখক : ইমাম ও খতিব (অ.দা.), কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!