আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে নৌকার কান্ডারী হতে চান মহানগর সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকসহ চার প্রার্থী। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো এ নির্বাচনে এখনও তেমন সাড়া না দেওয়ায় সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টি এখন ক্ষমতাসীন দলের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নে। বিগত প্রায় এক বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়রকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে। তবে নির্বাচন পূর্ব একাধিক প্রার্থী দলের কাছে মনোনয়ন চাওয়ায় কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ও দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সাধারণ নেতাকর্মীরা। প্রার্থীতা নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন।
নতুন প্রার্থীরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ ও নতুন নেতৃত্ব গড়তে তরুণদের বিকল্প নেই। বর্তমান মেয়র ও নগর সভাপতি দু’বার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। খুলনার উন্নয়নে তাঁর সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই রয়েছে। তাই জনপ্রত্যাশা পূরণে তাঁরা দলের কাছে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকার পক্ষেই থাকবেন।
বুধবার (১২ এপ্রিল) দলীয় মনোনয়ন আবেদনের শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগে মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, নগর যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম, সদর থানা সভাপতি ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম এবং নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) অধ্যাপক রুনু রেজা (রুনু ইকবাল বিথার)। অধ্যাপক রুনু যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল শহীদ ইকবাল বিথারের স্ত্রী।
নগর যুগ্ম সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আধুনিক ও স্মার্ট খুলনা গড়তে আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ছাত্র অবস্থা থেকে রাজনীতি করছি। বর্তমান নগর পিতা ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি দু’বার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নগরীর উন্নয়ন কাজ করছেন। ব্যক্তি হিসেবে কাজ করতে সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই রয়েছে। দল সুযোগ দিলে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ ও স্মার্ট খুলনা গতে তুলতে চাই।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করবো।’
জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও ভোগান্তিমুক্ত নগরী গড়তে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছি। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তখনও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু নগর সভাপতি ও আমাদের অভিভাবক হিসেবে সেটি তাঁর শেষ নির্বাচন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কারণে এবার প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছি। একজন রাজনীতিকের প্রত্যাশা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। খুলনা সিটিকে আধুনিক স্মার্ট নগরী গড়তে চাই। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় খুলনায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। কিন্তু এতে মানুষের ভোগান্তি কমছে। সড়ক-ড্রেন উঁচু হওয়ায় সংকট তৈরী হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন পরিসেবা ফি বেড়েছে। এসব সমস্যা সমাধান ও নগরবাসীর সেবক হতে দলে কাছে প্রার্থী হতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগ্রহে মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকের বিজয় হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। কোন কারণে দলীয় মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে কাজ করবো।’
আধুনিক, স্মার্ট, নারী বান্ধব ও সবুজে ঘেরা খুলনা গড়তে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন অধ্যাপক রুনু রেজা। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চান। তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে জড়িত। সততা ও দক্ষতার সাথে খুলনা সিটি ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কেডিএ’র সদস্য হিসেবে কাজ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী উদ্যোগে পদ্মাসেতু নির্মাণ আমাদের এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে পাল্টে দিয়েছে। অযুত সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। এসব কিছুকে কাজে লাগাতে চাই। নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের এখানে আমন্ত্রণ জানাতে চাই। এতে যেমন আমাদের বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি অর্থনীতিতে নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে।
অধ্যাপক রুনু ইকবাল বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে খুলনা নগরীতে পরিবেশ ও নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ অঞ্চলের নারীরা যেন সামলম্বী হয়ে উঠে, সে জন্য কাজ করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন অনুযায়ী খুলনাকে আধুনিক, চকচকে ভোগান্তিমুক্ত স্মার্ট খুলনা গড়তে চাই।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী আগামী ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে।
খুলনা গেজেট/কেডি/এমএম