খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় খুলনা স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্পের টেকনিক্যাল কমিটির পঞ্চম সভা মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নগর ভবনের শহিদ আলতাফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
সভায় অতিথিরা বলেন, জনগোষ্ঠীর আবাসস্থলে ঘনবসতি, নিরাপদ পানির মতো মৌলিক পরিবেশের অভাব, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাব, সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং শহর-অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বিস্তারের কারণে বাড়ছে সহিংসতা, মানসিক রোগ এবং অকাল মৃত্যু এই স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো সমাজ এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান এবং দাতা সংস্থাসমূহ কাজ করছে। নগর উন্নয়নের সাথে সংযুক্ত সকল প্রতিষ্ঠান এর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের উদ্যোগসমূহের সমন্বয় ও এই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে একটি স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলা সম্ভব।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ, কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সানজিদা বেগম, সচিব শরীফ আসিফ রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (চলিত দায়িত্ব) মশিউজ্জামান খান, সিভিল সার্জন ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ আহমেদ ও ডা. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ পারভেজ।
সভায় সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, কমিটির সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সুইস ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন যৌথ উদ্যোগে ২০১৯ সালে শুরু হয়। যার প্রধান লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক সুশাসনের মাধ্যমে শহর-অঞ্চলের নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। এই প্রকল্প প্রাথমিকভাবে বিশ্বের মোট পাঁচটি শহর যথাক্রমে: বাংলাদেশের খুলনা, কলম্বিয়ার বোগোটা, ক্যামেরুনের ডুয়ালা, মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটি এবং তিউনিসিয়ার তিউনিস নিয়ে শুরু হয়।
প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সভায় জানানো হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে খুলনা একটি স্বাস্থ্যকর শহরের মডেল হতে যাচ্ছে। এর আওতায় খুলনার সোনাডাঙ্গা সোলার পার্কে একটি ওপেন জিম বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেখানে নারী ও পুরুষ আলাদাভাবে বিনা খরচে শারীরচর্চা করতে পারছেন। ওপেন জিম সবার জন্য বিনা খরচে শারীরিক ব্যায়ামের সুযোগ তৈরি করে, যা নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
এছাড়া শহিদ হাদিস পার্কে একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবার্তা এবং শহরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানের ভিডিও বার্তা শেয়ার করা হচ্ছে। পাশাপাশি লিফলেট, এসএমএস এবং ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যকর শহর গড়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। গবেষণামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনা বিশ^বিদ্যালয় ও কুয়েটের সহযোগিতায় হাঁটার উপযোগিতা, হেলদি সিটি ইনডিকেটর এবং স্বাস্থ্যকর শহর প্রকল্পের মনিটরিং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে