মডার্ণ সী ফুডের সাবেক কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার সাহা হত্যাকান্ডের ৯ বছর পার হলেও তার স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় নিহতের স্বজনদের। যে মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন সে এখন ১৪ বছরে পা দিয়েছে। ছোট ছেলে বাবাকে দেখেইনি। ঘুরে ফিরে তারা মায়ের কাছে প্রশ্ন করে বাবা সম্পর্কে ? উত্তর দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদেন মা শিমু রায়।
শুক্রবার (২০আগস্ট) সকালে নিহত উজ্জ্বল কুমার সাহার বাড়ি যেয়ে দেখা যায় আজও তার মেয়ে বাবাকে খোঁজে। সন্তান শোকে বাবা ও মা প্রায় শয্যাশায়ী। ছোট ভাই সুমন সাহা পিন্টু ভাই হারানোর বেদনা এখনও ভুলতে পারেনি।
৮২/২২ বাগমারা মেইন রোডের ‘সত্যবতী’ ভবনের তিন তলার দ্বিতীয় তলায় থাকেন মৃণাল কান্তি সাহা। তিনি ইষ্টার্ণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। ছেলের ছবি দেখে সময় কাটে তার। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, উজ্জ্বল আমার বড় ছেলে। সে আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে কখনও তা ভাবিনি। তবে মৃত্যুর আগে উজ্জ্বল আমাকে প্রায়ই বলত কোম্পানীর এমডির ছেলে আমাকে শুধু সন্দেহ করে। তিনি ছেলেকে সেখান থেকে চাকরী ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে চলে আসে। তাদের সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার পরও এমন ঘটনাটি কেন ঘটালো তা তার বোধগম্য নয়।
শিমু রায় নিহত উজ্জ্বলের স্ত্রী। স্বামীর শোক এখনও ভুলতে পারেনি। দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি এখনও শ্বশুরবাড়িতে পড়ে আছেন। ২০০৫ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০০৭ সালে মেয়ে তানসী’র জন্ম হয়। ছেলেটি যখন মাতৃগর্ভে তখনই উজ্জ্বল কুমার সন্ত্রাসীদের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়। তানসী পিতার আদর ভালবাসা পেলেও ছেলে উৎসব পায়নি। বাবা কি জিনিষ সেটা বুঝতেই পারেনি উৎসব। বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে ডাকতে থাকে। সব বাচ্চাকে বাবার সাথে ঘুরতে দেখে দু’জনের মন খারাপ হয়ে যায়। জোহরা খাতুন বিদ্যানিকেতনের স্কুল শিক্ষিকা শিমু রায়। যতটুকু সময় পান স্বামীর স্মৃতি ও সন্তানদের নিয়ে সময় কাটান। এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীকে সম্পূরক চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করায় তিনি খুশি। এখন শুধু বিচার দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন শিমু রায়।
ছোট ভাই সুমন সাহা পিন্টু জানান, উজ্জ্বলের মতো শান্ত লোক আর হয়না। তিনি শুধু বড় ভাই ছিলেন না, আমার বন্ধু ছিলেন। সব কিছু আমরা দু’জন ভাগ করে নিতাম। বড় ভাইয়ের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। বলেন, এ হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার চাই। ভাইয়ের ছেলে ও মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। স্বল্প আয়ের মাঝেও নিজের সন্তান ও তাদের আবদার মিটাতে হয়।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল কুমার হত্যায় মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টরসহ ৮ জনের নামে সম্পূরক চার্জশীট
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৭ জুন সকাল পৌনে ১০টায় মেয়েকে স্কুলে দিতে যান উজ্জ্বল কুমার সাহা। এসময় জোহারা খাতুন বিদ্যানিকেতনের সামনে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে উজ্জ্বলের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে নিহতের ভাই সুমন কুমার সাহা মডার্ণ সী ফুডের ডিরেক্টর মেহেদী হাসান স্টারলিংসহ আট জনের নামে খুলনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি এ হত্যা মামলার সম্পূরক চার্জশীট দিয়েছে পিবিআই।
খুলনা গেজেট/ টি আই