খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
  আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ফখরুল-রিজভী-আমির খসরু
  ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণু হত্যা : একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন
  ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
  সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ বিচারপতি শপথ নিয়েছেন

স্বামীর দেয়া আগুনে স্ত্রীর মৃত্যু, মামলা নিয়েছে আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল ফরুকীয়া মাদ্রাসা লেনের ২৯ নম্বর বাড়িতে শুনশান নিরবতা। সন্তান হারানোর আর্তনাদ সে নিরবতাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। ডুকরে কাঁদছে খুকুমনির মা শিউলী বেগম। তার কান্না দেখে চেখে পানি ধরে রাখতে পারছেনা প্রতিবেশীরাও।

১৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে শিউলী বেগমের ছোট মেয়ে খুকুমনি ওরফে খুকুকে হত্যার উদ্দেশ্যে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী কামরুল ইসলাম স্বাধীন। ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় খুকুমনি তার মায়ের কাছে হত্যাকান্ডের বিবরণ দিয়ে যায়। থানায় মামলা করতে গেলে বিভিন্ন ফরমুলায় আটকে যায় বিষয়টি। আজ রোববার নিহতের মা শিউলী বেগম আদালতের দারস্ত হলে বিষয়টি আমলে নেয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সোনাডাঙ্গা মো: তরিকুল ইসলাম। আগামীকাল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন ওই আদালতের বিচারক। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. মাসুদুর রহমান।

নিহতের মা বলেন, গত তিনমাস আগে খুকুমনির সাথে বৈকালী মধ্যপাড়া এলাকার দেলোয়ারের ছেলে কামরুল ইসলাম স্বাধীনের সাথে পরিচয় হয়। এ বিষয়টিও তিনি জানতেন না। এর আগে শিউলী বেগমের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে গ্রামের বাড়ি শরণখোলার রায়েন্দা চলে যান। লকডাউনের কারণে সেখানে থাকতে হয় তাকে। এরপর ভাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে পাইকগাছায় চলে যেতে হয় তাকে।

গেল বছরের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে খুকুমনি বাড়ি থেকে ছয়দিনের জন্য উধাও হয়ে যায়। অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন কামরুল ইসলাম স্বাধীন নামে এক ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পরে শিউলী বেগম তাদের বিয়েটি মেনে নেয়। পরে খুকুমনিদের ভাড়া বাড়িতে একসাথে বসবাস করতে থাকে তারা। বিয়ের দেড় মাসের মাথায় এসে তাদের মধ্যে ছোটখাট বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে থাকে। এ নিয়ে তার মেয়েকে প্রায়ই মারপিট করত স্বাধীন। শ্বশুর শ্বাশুড়ির হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিমাংসাও হয়ে যেত। ভালবাসা দিবসেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। সেদিন রাতে তাকে প্রচন্ড মারধর করে স্বাধীন।

যেভাবে হত্যা করা হয় খুকুমনিকে

১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে হঠাৎ ফোন আসে খুকুমনির মা শিউলী বেগমের কাছে। সেখান থেকে জানানো হয়, তার মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। খবরটি পেয়ে মেয়ে-জামাইকে কে রেখে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান। ঐদিন সন্ধ্যা থেকে খুকুর ওপর অত্যাচার চলে। গায়ে প্রচন্ড ব্যাথার কথা স্বামীকে জানালে বাইরে থেকে ঔষধ এনে দিলে খুকু সেটি গ্রহণ করেনি। পরে খাবার পানিতে ঔষধ মিশিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়। ঘুম ঘুম ভাব আসলে ঘরের দরজার পর্দা দিয়ে পেচিয়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাঁচার আকুতি জানালেও পাষাণ স্বাধীনের মন গলেনি। পরে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ওই দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাড়ির মালিকের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকুমনির মা শিউলী বেগমকে ফোন দিয়ে জানান, ‘খুকুমনির আগুনে পুড়ে গেছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ রাত সাড়ে চারটার দিকে শিউলী বেগম মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ি এসে কাউকে না পেয়ে হাসপাতালে চলে যান। মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ দেখে ওই দিন বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যায়। চারদিন ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুকুমনির মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার আগে খুকু তাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যান। পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি তার লাশ শরণখোলার রায়েন্দা গ্রামে দাফন করা হয়। লাশ দাফনের সময় স্বামী স্বাধীনও সেখানে উপস্থিত ছিল।

নিহত খুকুমনির মা শিউলী বেগম স্বাধীনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি আদালত গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল সোমবার আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানা গেছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!