আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবে সরকার। পাশাপাশি তালিকা করে সব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হবে। বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি আরও বলেন, যারা কওমী ও মওদুদী মতবাদ চালু করতে চায়, তাদেরকে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনেকেই নকল গেজেট ছাপিয়ে অথবা বিভিন্ন স্থান থেকে তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা সুবিধা নিচ্ছেন। তালিকা প্রনয়ন সম্পন্ন হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বীরাঙ্গনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, বীরাঙ্গনাদের তালিকা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত আছে। তালিকা ভুক্ত হওয়ার জন্য তিনি বীরাঙ্গনাদের প্রতি আহ্বান জানান। ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত তালিকা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার পরই ৩০ লাখ শহীদের তালিকা প্রণয়ন করার কাজে হাত দেবে সরকার।
এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসন এই প্রথমবারের মত কপিলমুনি মুক্ত দিবস পালন করে। বিকেলে স্থানীয় সহচরী বিদ্যা মন্দির প্রঙ্গনে কপিলমুনি মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সাদিকুর রহমান খান সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুণ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কপিলমুনির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এখানকার যোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর রাজাকারদের শাস্তি দিলে আজকে তাদের দোসররা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙতে সাহস পেত না।
এছাড়া বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তিঘোষ বলেন, ৬১ জন বীরাঙ্গনার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীতে গুরুদাসীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।
সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র ও সাবেক ছাত্র নেতা আনন্দ মোহন বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাতুল আলম, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর, থানা অফিসার ইনচার্জ এজাজ শফী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, খুলনা জেলা পরিষদ সদস্য শেখ কামরুল হাসান টিপু, ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, কপিলমুনি মুক্ত দিবসে আলোচনা সভা স্থলে হাজারও মানুষ উপস্থিত হয়। স্কুলের প্রধান ফটকের পাশে বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর প্রতিকৃতি ও এখানকার যুদ্ধে শহীদ কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন আনুর জীবনী প্রদর্শন করা হয়। এখানকার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজাকারদের দখল থেকে কপিলমুনি মুক্ত করা হয়।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন