শুভ হাওলাদারকে হত্যার বিশ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী মোঃ সজল ব্যাপারীকে (১৫) গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন মধুপুর গুচ্ছগ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামী সজল পার্শ্ববর্তি নদীতে ঝাপ দিলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও নদীতে ঝাপিয়ে আসামীকে ধরতে সক্ষম হন।
এর আগে বয়রা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সিএন্ডবি কলোনি) দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শুভ হাওলাদার হত্যাকান্ডের ঘটনায় সোনাডাঙ্গার ময়লাপোতা বস্তির তিনটি ঘর ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ হত্যা মামলায় জাহিদ নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে রোববার রাতে নিহত শুভর মা তিনজন আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার জাহিদ এ মামলার তিন নম্বর আসামি ও ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আমিরুনের ছেলে। সন্তান হারানোর শোকে শুভর মা ঝুমুর বেগম অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির ঘটনা জেনে যাওয়ায় শুভকে রোববার দুপুরে যেকোন এক সময়ে নির্মমভাবে খুন করে ওই ফাঁকা মাঠে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা । এ ঘটনার জের ধরে ওই এলাকার মানুষ ফুসে উঠেছে। সোমবার মাগরিবের নামাজের আগ মুহুর্তে এলাকার সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মাদক ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মাদ, শাহীন ও অমিরুনের ঘর ভাংচুর করে। উত্তেজিত জনতা তাদের বস্তি থেকে উৎখাত করার কথাও বলতে থাকে। আমিরুনের পরিবারের সকল সদস্য মাদক ব্যবসায়ী।
হত্যাকান্ডের পর থেকে তারা সকলে বস্তি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। যা ওই এলাকার মানুষের সন্দেহের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমিরুন ওই এলাকার উঠতি বয়সের শিশু ও কিশোরদের দিয়ে মাদক ব্যবসা ও বিকিকিনি করায়। যা পুলিশের অজানা নয়। আমিরুনের ফোনে আড়ি পাতলেই শুভ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা যাবে বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক বলেন, হত্যাকান্ডের রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। হত্যা মামলার এজাহারনামীয় তিন নম্বর আসামি জাহিদকে রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে র্যাব। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে থানায় হস্তান্তর করে তারা।
এদিকে নিহত শুভর মা রোববার রাতে তিনজন আসামির নামসহ অজ্ঞাতনামা সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিন ঘটনাস্থলের ফুটেজ সংগ্রহ করে বস্তির একটি ঘর থেকে রক্তমাখা গেঞ্জি ও প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। শুভর মা’র দায়ের করা মামলার প্রধান আসামিকে আটক করতে পারলেই মূল রহস্য বের হয়ে আসবে। তাছাড়া হত্যাকান্ডের পর পরই বাবু ওরফে স্টিক বাবু ও মফিজকে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। বিকেলে তথ্য নিয়ে তাদেরকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন শুভর বাবা ও মা। শান্তনা দিতে এলাকার মানুষ ছুটে যাচ্ছেন তার বাড়িতে। সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুভর মা। আজ বিকেলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই