খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ড. শেখ আব্দুল রশিদকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১
  ছয় মামলায় সাবের হোসেনের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই
  বাংলাদেশী ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি

সোনিয়াকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে ইব্রাহীম

সাগর জাহিদুল ও একরামুল হোসেন লিপু

স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। ২ সন্তানের জননী গৃহবধু সোনিয়া বেগম (২৬) কে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে তাঁর স্বামী মোঃ ইব্রাহীম (৩২)। 

স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যার প্রচনা চালিয়ে হত্যার দায় ধামা চাপা দিতে চেয়েছিল স্বামী ইব্রাহীম খান। অবশেষে পুলিশের জালে আটক পড়ল সে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারী) বিকালে স্ত্রী হত্যার কারণ জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। খুলনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক নয়ন বিশ্বাস ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

দিঘলিয়া থানার ইনেন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ১০ বছর আগে পারিবারিকভাবে পানিগাতি গ্রামের সলেমান বিশ্বাসের মেয়ে সোনিয়ার সাথে দিঘলিয়া খান পাড়ার ইসলাম খানের ছেলে ইব্রাহীম খানের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তারা বেশ সুখে ছিলেন। তাদের ঘরে সাত বছরের একটি মেয়ে ও তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ২৫ জানুয়ারি রাত ১০ টার দিকে ইব্রাহীম খানের জমানো ১০ হাজার টাকা নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ দেখা দেয়। স্ত্রীর নিকট সে জানতে চায় টাকাটা গেল কোথায়। কোন উত্তরা না দেওয়াতে উভয়ের মধ্যে বিবাদ বাড়তে থাকে। নিজের ক্রোধ সামলাতে না পেরে ভ্যান চালক স্ত্রীর গায়ের ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে নিজেকে হত্যার দায় থেকে রক্ষা করার জন্য প্ররোচনা চালায় স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।

দিঘলিয়া থানার ইনেন্সপেক্টর (তদন্ত) রিপন কুমার সরকার খুলনা গেজেটকে বলেন, ২৫ জানুয়ারি রাতে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের খান পাড়ায় সোনিয়া বেগম নামে এক গৃহবধুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে থানায় খবর আসে সোনিয়া বেগম নামে এক গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছে দেখতে পাই। নিহতের গলায় গার্মেন্টস এর ফিতার ডাবল ভাঁজ ছিল।

তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করি। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করার সময় লাশের গলায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। আত্মহত্যা কিনা সন্দেহ সৃষ্টি হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা। তবে নিহতের স্বামীর দাবি গার্মেন্টস এর ফিতা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তার স্ত্রীর আত্মহত্যা করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খুলনা ‘ক’ সার্কেল রাজু আহন্মেদ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পর থেকেই নিহতের স্বজনদের দাবী ছিল সোনিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের স্বামী ইব্রাহিম (৩২) কে ঘটনার পরদিন থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে তাঁর স্ত্রীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার করার কথা স্বীকার করে। দিঘলিয়া থানা পুলিশ রাতেই তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১১।

মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) গ্রেপ্তারকৃত ইব্রাহীমকে কোর্টে চালান দেওয়া হয়। পরে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

হত্যাকান্ডের যে বিবরণ দিল ইব্রাহীম

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তন্ময় মোহান্ত খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদককে জানায়, ২৫ জানুয়ারি রাতে ভ্যান চালক ইব্রাহীম স্ত্রীর কাছে গিয়ে জমানো ১০ হাজার টাকা চায়। কিসের টাকা বললে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় ইব্রাহীম সোনিয়ার গায়ের ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার কিছুক্ষণ পরে বাইরে থেকে দড়ি এনে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তার লাশ। হত্যাকান্ডের সময় নিহতের তিন বছর বয়সী সন্তান ইমন ওই ঘরে ছিল। রাতে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরাতহাল রির্পোট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বুধবার দুপুর ১১ টার দিকে পুলিশ আসতে বললে থানায় আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে কিছু বলেনি ইব্রাহিম। জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকে দুপুরের দিকে ইব্রাহীমকে আদালতে হাজির হাজির করা হয়। পরে নিহতের পিতা সলেমান বিশ্বাস বাদী হয়ে ইব্রাহীম খানসহ অজ্ঞাতনামা আরও দু’জন আসামির নাম উলে­খ করে থানা হত্যা মামলা দায়ের করেন।

খুলনা গেজেট/ এস আই/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!