খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের
  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট
নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ প্রকৃ‌তি‌প্রেমীরা

সূর্যমুখী চা‌ষে লাভের প্রত্যাশা খুলনা অঞ্চলের কৃষকদের

ত‌রিকুল ইসলাম

সূর্যমুখী চাষে খুলনা অঞ্চলের কৃষকরা লা‌ভের স্বপ্ন দেখ‌ছেন। তারা আশা কর‌ছেন আবহাওয়া অনুকূ‌লে থাক‌লে এবছর পর্যাপ্ত লাভ পা‌বেন। উপকূলীয় লবনাক্ততার ম‌ধ্যেও সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। অ‌ধিকাংশ বা‌ড়ির আ‌ঙ্গিনায় কম‌বে‌শি হলুদ সূর্যমুখী ফুল শোভা পা‌চ্ছে। একদি‌কে সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। অন‌্যদি‌কে, সাধারণ মানু‌ষ ও প্রকৃ‌তি‌প্রেমী দর্শনার্থী‌দের মন আকৃষ্ট কর‌ছে।

খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বা‌গেরহাট জেলা নি‌য়ে কৃ‌ষি সম্প্রসারণ দপ্ত‌রের খুলনা অঞ্চল গ‌ঠিত।

কৃ‌ষি সম্প্রসারণ দপ্তর, খুলনা অঞ্চ‌লের অ‌তি‌রিক্ত প‌রিচালক মোহন কুমার ঘোষ ব‌লেন, গত মৌসু‌মে খুলনা অঞ্চ‌লে ২হাজার ৮৯৫ হেক্টর জ‌মি‌তে চাষ হয়। এ মৌসু‌মে ৩হাজার ১৪৬ হেক্টর জ‌মি‌তে আবাদ হ‌য়ে‌ছে। এরম‌ধ্যে খুলনা জেলায় ১৮৫৫ হেক্টর, বা‌গেরহাটে ১০৪৮ হেক্টর, সাতক্ষীরায় ১৩৮ হেক্টর ও নড়াই‌লে ১০৫ হেক্টর জ‌মি‌তে আবাদ হ‌য়ে‌ছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত না হলে আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ সম্ভব হতো। সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার ও বীজ প্রণোদনা দেয়া হ‌য়ে‌ছে ব‌লে তি‌নি জানান।

বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন মুখরিত হয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। এটি যেন ফসলি জমি নয়, এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কৃষক শিবপদ মন্ডল বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ২বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুল ভালো হয়েছ। প্রায় প্রতিটি গাছেই বড় ফুল ধরেছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনের পুকুরের চারপাশ, চারুকলা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ও পেছনে, ভিসি বাসভবনের সামনে সূর্যমুখী ফুলের হয়েছে আবাদ। সবুজ পাতার আড়ালে সূর্যমুখীর হাসি কাছে টানছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। সূর্যমুখী ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ সেলফি তুলছেন, কেউবা ছবি তুলছেন। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ক্যাম্পাসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মালি মো. বাবুল শেখ বলেন, ক্যাম্পাসে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আমাদের সূর্যমুখী ফুলের বীজ এনে দিয়েছিলেন।

সাতক্ষীরার সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের কৃষক ওলিউর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে তিনি ১বিঘা জমিতে হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। খেতের অধিকাংশ গাছেই ফুল বড় হয়েছে। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয় তার।

সাতক্ষীরার তালা উপ‌জেলার কৃষক নূরুজ্জামান ব‌লেন, কৃ‌ষি অ‌ফিস থে‌কে বীজ পে‌য়ে সূর্যমুখীর চাষ ক‌রি। অ‌নেক বড় ফুল ধ‌রে‌ছে। প্রতি‌নিয়ত লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সূর্যমুখী ফুল দেখ‌তে আ‌সেন, ছবি তোলেন।

বি‌ভিন্ন উপ‌জেলা কৃ‌ষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। হাইসান, এফ-১ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ হ‌য়ে‌ছে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে প্রায় আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪থে‌কে ৫হাজার টাকা।

কয়রা উপ‌জেলা কৃ‌ষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ব‌লেন, সূর্যমুখী লবন স‌হিঞ্চু। উপকূ‌লে লবনাক্ততার ম‌ধ্যে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখী চা‌ষে উদ্বুদ্ধ কর‌তে ১হাজার ৭০০ জন কৃষক‌কে ১কে‌জি ক‌রে বীজ ও সার দেয়া হ‌য়ে‌ছে। কয়রা উপ‌জেলায় এ বছর ২২০ হেক্টর জ‌মি‌তে আবাদ হ‌য়ে‌ছে।

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, উপকূলের লবনাক্ত এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভালো হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!