খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

সুপেয় পানি সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কয়েকটি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শত শত মানুষ জলাবদ্ধবার কারণে ভুগছে সুপেয় পানি, নিরাপদ পায়খানা এবং হাইজিন সংকটে। নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার অভাবে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের ২৩টি গ্রাম, ঝাউডাঙ্গার ২১টি ও বল্লী ইউনিয়নের ১৭টি ও মিলে মোট ৩ ইউনিয়নের ৬১ গ্রাম এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩৩টি গ্রামের শত শত পরিবার এখনো নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা এবং হাইজিন সমস্যায় আক্রান্ত। এরমধ্যে আগরদাড়ি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৮৮৮ পরিবার, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ হাজার ৯২২ পরিবার,বল্লী ইউনিয়নে ৩হাজার ৮২৬ পরিবার, সাতক্ষীরা পৌরসভার ২৬ হাজার ৮৯৬ পরিবার ও কলারোয়া পৌরসভার ৬ হাজার ৫৭০ পরিবার মিলে ৫৪ হাজার ১০২ পরিবারের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের এ সমস্যা প্রকট।

ঝাউডাংগা ইউনিয়নের বলাডাংগা গ্রামের শরবানু বেগম, ওয়ারিয়ার রুপালী বেগম, আগরদাড়ি ইউনিয়নের বকচরা গ্রামের শহিদুল্লাহ সরদার, ফজিলা খাতুন, বল্লী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম, সাবিনা খাতুন, সাতক্ষীরা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাটিয়া উত্তরপাড়ার বেবী খাতুন, ২ নং ওয়ার্ড রাজার বাগান দাসপাড়া এলাকার সুসমিতা দাস, ৩ নং ওয়ার্ড বদ্দিপুর কলোনির হোসনেয়ারা আক্তার ময়নাসহ অনেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাইজিন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, তাদের এলাকা বৃষ্টির সময় ৭ থেকে ৮মাস জলাবদ্ধ থাকে এবং লবণাক্ত থাকায় খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক কলস খাবার পানি আনতে হয়। আবার এক ড্রাম পানি ৩০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া লাগে। বর্ষা মৌসুমে ভিটেবাড়িতে পানি জমে থাকায় ল্যাট্রিন করার মতো জায়গাও থাকেনা। আর লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, চুলকানী, পাচড়া, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তারা।

তারা আরও বলেন, বেতনা নদী ভরাট হওয়ায় এবং এলাকায় শত শত মাছের ঘেরের কারণে পানি সঠিকপথে নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উত্তরণ এর ওয়াই ওয়াশ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী হাসিনা পারভীন জানান, এলাকার মানুষের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আরও বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি এসডিজির ৬ নং গোল অর্জনের জন্য সরকারী পদক্ষেপ জরুরী ।

তিনি বলেন, একটি গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৭৯% নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়া পদ্মা প্রবাহ থেকে এলাকার বিচ্ছিন্নতা ও ব্যাপকভাবে নোনা পানির চিংড়ী চাষের কারণে এলাকায় লবণাক্ততার তীব্রতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে উপকূলীয় বাঁধের পূর্বে এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ সংরক্ষিত পুকুরের পানি পান করত। কিন্তু চিংড়ী চাষ সম্প্রসারণের ফলে লবণাক্ততার কারণে ঐসব পুকুরগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া এসব অঞ্চলে খাবার পানি সংগ্রহ করা বিশেষ করে মহিলাদের জন্য বড় ধরণের একটি কঠিন কাজ। এক কলস খাবার পানি সংগ্রহের জন্য ২ থেকে ৫ কিমি দূরে যেতে হয়, দাঁড়াতে হয় দীর্ঘলাইনে। দিনের একটা বড় অংশের শ্রম ঘন্টা ব্যয় হয় এ কাজে। তারপরও যে পানি সংগ্রহ করা হয় বা ক্রয় করা হয় সেটা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।

তিনি আরও বলেন, খাবার পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে অসংখ্য ব্যবসায়ী খাবার পানি বিক্রির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্মত নয়। তাছাড়া দরিদ্র মানুষদের পক্ষে বাজারজাত উচ্চ মূল্যের এসব পানি কিনে খাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। যার ফলে তারা অনিরাপদ পানি পান করে থাকে যে কারণে বিভিন্ন রকমের পেটের পীড়া, আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

এ ব্যাপারে ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আজমল উদ্দীন জানান, এলাকায় খাবার পানির সমস্যা প্রকট। খাবার পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী। উত্তরণ দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় হতদরিদ্র ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন এ্যাডভোকেসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উত্তরণসহ বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থার কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় পানির লেয়ার না পাওয়ায় ডিপটিউবওয়েল বসানো সম্ভব হয়ে উঠছেনা। তবে নিরাপদ পানি ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বর্তমানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। খোলা স্থানে মলত্যাগের হারও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

সাতক্ষীরা পৌর সভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, সুপেয় পানির জন্য দু’টি পাওয়ার ট্রিটমেন্ট প্লান রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!