খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চায় না বাংলাদেশ, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহবান
  বাংলাদেশি আটকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ভারত : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে উৎসবে গাড়িচাপায় নিহত ৯
  কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে আবারও গোলাগুলি

সুন্দরবনে বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে ফিরলেন মৌয়াল কুদ্দুস

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের গহীনে ঢুকে মধু কাটার পর নদীতে গোসল করতে গিয়ে কুমিরের আক্রমনে গুরুতর আহত হয়েছে আব্দুল কুদ্দুস সানা (৫৫) নামের এক মৌয়াল। কুমিরের সাথে রিতিমত যুদ্ধ করে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে সে। গত শনিবার (১১ মে) সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৪ মে) লোকালয়ে ফিরে আসার পর তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিরের কামড়ে আব্দুল কুদ্দুস এর বাম হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন আব্দুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি মৌয়াল দল। সেসময় বাঘের আক্রমনে আহত হয় মৌয়াল কুদ্দুস।

কুমিরের আক্রমনে আহত আব্দুল কুদ্দুস সানা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ আলী সানার ছেলে।

তার সঙ্গী অন্যান্য মৌয়ালরা জানান, গত ৭-৮ দিন আগে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন আব্দুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়াল। তাদের মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস ও আব্দুল হালিম আপন দুই সহোদর। গত ১১ মে সুন্দবনের গহীনে তারা অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মধুর চাক পেয়ে তা ভাঙার পর দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছিয়া নদীতে গোসল করতে নামেন। এক পর্যায়ে নদীর হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় হঠাৎ আব্দুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন অন্যরা। আকস্মিক এ ঘটনায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এসময় তারা পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখেন। এর কিছুক্ষ পর তার ভাই হালিমসহ অন্যরা পানির উপরে কুমিরের লেজ ভাসতে দেখে বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে থাকেন। এরপর তারা আব্দুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। এভাবে টানা চার মিনিট টানাটানির একপর্যায়ে হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীতে চলে যায় কুমিরটি।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আব্দুল কুদ্দুস জানান, কুমির যখন তার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় তিনিও সমানতালে পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পারায় এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সহোদর আব্দুল হালিম জানান, শুরুতে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। ফলে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। তবে কুমিরের লেজ আছড়ে পড়া দেখে তিনি জীবনের মায়া ভুলে ভাইকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাইকে বাঁচাতে চিৎকার করে দলের অন্য চার সদস্য বক্স গাজী, শহিদুল, সিরাজুল ও এলাহি বক্সের সহযোগিতা চান। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি এবং পানিতে প্রচন্ড শব্দ তৈরি করলে কুমিরটি ভাই কুদ্দুসকে ছেড়ে চলে যায়।

তিনি আরো জানান, গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে মাছ, কাঁকড়া শিকারসহ মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যাতায়াত করেন তারা। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তারা। তখন তাদের দলে ছিলেন সাতজন। বাঘ লাফ দিয়ে আসার মুহূর্তে তারা দেখতে পেয়ে সবাই মিলে চিৎকার এবং লাঠিসোটা দিয়ে গাছে আঘাত করে এলাকা ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। ২০০৮ সালে মধু কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তাদের খালু দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন-সংরক্ষক (এসিএফ) এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। বৈধভাবে যেসব মৌয়াল মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণীর কবলে পড়ে হতাহত হন তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সরকারি সহায়তার জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়।

তিনি আরো জানান, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন আরো দু’জন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!