খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

সুন্দরবনের নদী-খালে ১০০ কুমির অবমুক্ত 

মোংলা প্রতিনিধি

বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র পর্যটন ষ্পট করমজলে লালিত সুন্দরবনের ১০০টি বন্যপ্রানী চলে গেল নিজ ঠিকানায়। পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের বিভিন্ন নদী ও খালে এ বন্য প্রানীগুলো অবমুক্ত করেন বন বিভাগ এবং বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধিসহ বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ টিম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বন্য প্রানীগুলো তাদের নিজ ঠিকানায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবেশ ও মন্ত্রনালয় ও বন বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।

বুধবার(১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বনের পর্যটক ষ্পট ও বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র সংলগ্ন করমজল খালে উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি প্রধান অতিথি ও প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নিজেদের হাতে এ প্রানীগুলো নদীতে অবমুক্ত করেন।

বন বিভাগ সুত্রে জানায়, বনের বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮শ’ ৭৪ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। এই বিশাল জল ভাগের ছোট-বড় চার’শ ৫০টি নদী ও খাল রয়েছে।

বিশাল আয়তনের এই সুন্দরবনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ।

সুন্দরবনের নোনা পানির নদী ও খালে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। ইতিমধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘডিয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই বনের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং লোনা পানিক কুমির বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা ও বংশবিস্তার করতে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে এ কেন্দ্রে পিলপিল ও জুলিয়েট নামে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির ও রোমিও নামের নোনা পানির একটি পুরুষ কুমিরে প্রজননের মাধ্যমে তাদের দেয়া ডিম বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশনে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে বনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়।

মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি বন্যপ্রানী সুন্দরবনে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়।

বুধবার দুপুরে খুলনা-২০টি, সাতক্ষিরা-২০টি, শরনখোলা-২০টি ও চাদঁপাই রেঞ্জ-৩০টি বাচ্চা কুমির করমজলের খালসহ সুন্দরবনের অন্যান্য নদী ও খালের গহিনে মোট ৯০টি কুমির অবমুক্ত করা হয়।

এছাড়া করমজলে নতুন করে গড়ে ওঠা পরিবেশ বান্ধব বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির ১০টি বাটাগুড় বাস্কা কচ্চপও অবমুক্ত করা হয়েছে।

কুমির অবমুক্ত করণ অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এমপি।

অবমুক্ত করণ অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী বলেন, এই প্রজনন কেন্দ্র থেকে ডুলা হাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে শতাধিক কুমির অবমুক্ত করার পর বর্তমান কেন্দ্রে কুমিরের সংখ্যা ৯৪টি, আর একই জায়গায় ২০১০ সালে গড়ে ওঠা বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির বাটাগুড় বাস্কা জাতীয় কচ্ছপ রয়েছে ৪৩৫টি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ১০০টি বন্যপ্রানী সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে এবং এ সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সকল চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং আগামীতেও থাকবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী, খুলনাঞ্চলে বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মহাসিন হোসেন, পুর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন, বন্য প্রানী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও নির্মল কুমার পাল, চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক, বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ। এছাড়া এসময় কবির, চাদপাই, ঢাংমারীসহ বিভিন্ন ষ্টেশন কর্মকর্তা ও বন রক্ষীরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে করমজল এ কেন্দ্রে পিলপিল ও জুলিয়েট নামে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির এবং রোমিও নামের নোনা পানির একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই দুই নারী ও পুরুষ কুমির দম্পত্তির ওপর নির্ভর করেই চলছে এ প্রজনন কেন্দ্রটি।

জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে প্রজনন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। আর সুন্দরবনের ৪শ ৫০টি নদী ও খালে ১৫০-২০০টি নোনা পানির কুমির রয়েছে।

বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!