খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

সিন্ডিকেট ভাঙতে আরও সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

গেজেট ডেস্ক

দেশের বাজারে বছরের ব্যবধানে ডিমের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিছু মুনাফালোভীর দৌরাত্ম্যে দাম বেড়েছে খুচরা বাজারেও। এতে সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে গেছে ডিমের দাম। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার শর্তসাপেক্ষে ৭ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি করা ডিমের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিমের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শর্তসাপেক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে সীমিত সময়ের জন্য ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ঢাকার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর মেসার্স মিম এন্টারপ্রাইজকে এক কোটি পিস, যশোর চৌরাস্তা মোড়ের মেসার্স তাওসিন ট্রেডার্সকে এক কোটি পিস, সাতক্ষীরার লবশার মেসার্স সুমন ট্রেডার্সকে ২০ লাখ পিস, রংপুরের ভগীর আলিফ ট্রেডার্সকে ৩০ লাখ পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলের হিমালয়কে এক কোটি পিস, শান্তিনগরের মেসার্স প্রাইম কেয়ার বাংলাদেশকে ৫০ লাখ পিস এবং তেজকুনিপাড়ার মেসার্স জামান ট্রেডার্সকে ৫০ লাখ পিস ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আমদানির শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে—দ্য ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথের গাইডলাইন অনুযায়ী বার্ড ফ্লু মুক্ত জোনিং বা কম্পার্টমেন্টালাইজেশনের স্বপক্ষে রপ্তানিকারক দেশের কম্পোনেন্ট অথরিটি কর্তৃক জোনিং অথবা কম্পার্টমেন্টালাইজেশনের সার্টিফিকেট বা ঘোষণা দাখিল করতে হবে। আমদানিকৃত ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে।

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক-কর পরিশোধ ও অন্যান্য বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে। ডিম আমদানির প্রতি চালানের ন্যূনতম ১৫ দিন আগে সংশ্লিষ্ট সংগনিরোধ কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়া আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরবর্তী সাত দিন পরপর অগ্রগতি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে। আমদানির অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এদিকে, বাজারে দাম কমাতে ডিম আমদানির ওপর থাকা শুল্ক-কর সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে লেখা চিঠিতে কমিশন এ অনুরোধ জানায়।

এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তার উপস্থিতি টের পেয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিক দাম কমিয়ে ফেললেও ভোক্তা চলে গেলে আবার বাড়তি দামে বিক্রি করেন। এর পরও প্রতি ডিমে ৩ টাকারও বেশি মুনাফা করার প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

সম্প্রতি বাজারে ডিমের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে, যা চলতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছায়। গত সোমবার ঢাকার বাজারে এক ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৯০ টাকা দরে। যদিও গতকাল বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বড় বাজারগুলোয় প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৫৫-১৬০ টাকা ও পাড়া-মহল্লায় তা ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ কয়েক সপ্তাহ আগে এ ধরনের ডিম ১৪০-১৫০ টাকা বা তারও কম দামে বিক্রি হচ্ছিল।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ডিমের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। মূলত এ কারণেই দাম বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশনও মনে করছে, বাজারে চাহিদার তুলনায় কম ডিম সরবরাহ হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, গত এক মাসে স্থানীয় বাজারে ডিমের দাম ১৫ শতাংশ ও ১ বছরে তা ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।

ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পোলট্রি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং পরিপূরক অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ডিম সরবরাহে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাজারে সরবরাহে ঘাটতির কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ডিম আমদানিতে সাময়িক সময়ের জন্য শুল্ক-কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!