খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২
  সাতক্ষীরার তালায় ধানের ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত আরও ১১ জন

সামেক হাসপাতালে অক্সিজেন বিপর্যয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারনে বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় ৭ জন রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রেই এই কমিটি সরেজমিনে ঘটনার তদন্ত করবেন।

স্বাস্থ্যবিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুই সদস্য বিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন সহকারি পরিচালক, মেডিকেল সাব ডিপো, খুলনা, ডাঃ রফিকুল ইসলাম গাজী ও পোর্ট হেলথ অফিসার মংলা, ডাঃ মোশারফ হোসেন।

সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খুদ সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের ঘটনার তদন্তে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করে বলেন, খুলনা থেকে ফোনে আমাকে এই তদন্ত কমিটির কথা জানানো হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে সামেক হাসপাতালে আসবেন এবং ঘটনার তদন্ত করবেন। তদন্ত কমিটির সদস্যদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। তবে এখনো চিঠি আমি হাতে পাইনি।

এর আগে ঘটনা তদন্তে সাতক্ষীরায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কাজী আরিফ আহমেদকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কিমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মারুফ আহমেদ ও সামেক হাসপাতালের ডাঃ সাইফুল্লাহ। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে অক্সিজেন সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সামেক হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে মৃতদের স্বজনরা।

আইসিইউতে মারা যাওয়া দেবহাটার ভাড়াশিমলা গ্রামের আকরাম হোসেন খানের ছেলে তাজ মুহাম্মদ খান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা করোনা পজেটিভ ছিলেন। গত ৪৫ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। কয়েকদিন ধরে শ্বাস কষ্ট দেখা দিচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দেয়নি। সে কারণে আজ কতগুলো রোগী মারা গেল। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার বাবাকে হারালাম। তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে অক্সিজেন ছিলনা। রাত ৮টা অক্সিজেন আসে। এই সময়ে এই রোগীগুলো কিভাবে বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, বাবা যখন মারা গেছে। তখন ফোন দিয়ে আমাদের ডাকছে। আগে থেকে আমাদের জানানো হলে বাবার সাথে শেষ দেখা করতে পারতাম। এখানকার চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও অভিযোগ করেন। আমার বাবাকে হারিয়েছি। ভবিষ্যতে এভাবে যেন আর কেউ তার বাবাকে না হারায় সেজন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানান তিনি।

শ্রীউলা ইউনিয়নের বকচর গ্রামের আসাদুল্লাহ বলেন, আমার বড় ভাই রবিউল ইসলাম পারভেজকে ভর্তি করেছিলাম। অক্সিজেন সংকটের কারণে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আমার ভাই মারা যায়। এখানে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না।

প্রসঙ্গতঃ করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ২৮৫ রোগী ভর্তি রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে এই হাসপাতালে। বুধবার বিকাল থেকে অক্সিজেনের চাপ কমতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার পর হঠাৎ করে অক্সিজেন সরবরাহে চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে তীব্র অক্সিজেন সংকটে পড়েন রোগীরা। ঘন্টাদেড়েক এ অবস্থা বিরাজ করছিল। ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ না পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরপর সাতজন রোগী মারা যায়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৬ জনের কথা স্বীকার করেছেন।

এসময় হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আইসিইউ ও সিসিইউ’র সামনে রোগীর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সেখানকার বাতাস। যশোর থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌছে রাত আটটার দিকে সমস্যার সমাধান করেন। মৃতের স্বজনদের অভিযোগ, অক্সিজেনের অভাবে এসব রোগী মারা গেছেন। তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সামেক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খুদা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কথা স্বীকার করে বলেন, আমাকে ওভার ফোনে জানানো হয়েছে। আগামীকালও হয়ত তারা অসতে পারেন। তদন্ত কমিটিকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা জন্য খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাকে বলা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!