প্রিয় দল আর্জেন্টিনার সেরা প্রিয় ফুটবলার লিওলেন মেসি। প্রিয় সেই ফুটবলারের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ সাদা কাগজে দেশের সবচেয়ে বড় ছবি এঁকে চমক সৃষ্টি করেছেন বিএল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন মন্ডল। ৫৬০ পিচ এ ফোর সাইজের সাদা কাগজে নয়ন মন্ডল টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিবা রাত্রি প্রচেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছেন মেসির আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন ছবিটি ছবি আঁকতে।
প্লাস্টিক পেইন্টিংয়ের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে তুলির আঁচড়ে তিনি তার স্বপ্নের প্রাণপুরুষ মেসির প্রতিকৃতি অংকন করেছেন।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ১ টায় বিএল কলেজ ক্যাম্পাসে তার অঙ্কিত এ ছবি প্রদর্শিত হয়। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সেখ হুমায়ুন কবির, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ কলেজের শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রীসহ অনেক উৎসুক জনতা ছবিটি দেখার জন্য ভিড় জমায়। ছবিটি দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট বাই ২০ ফুট।
নয়ন মন্ডলের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটিয়া ইউনিয়নের কালনগর গ্রামে। প্রিয় ফুটবলার মেসির কাছে ছবিটি পৌঁছালে তার জীবনের বড় সার্থকতা হবে। ভবিষ্যতে তিনি একজন বড় স্কেচ আর্টিস্ট এবং বিশ্বসেরা কিছু একটা অংকন করতে চান।
নয়ন মন্ডল খুলনা গেজেটকে বলেন, আমরা দুই ভাই টিউশনি করে খুলনার সাত রাস্তা মোড়ে একটি মেসে থাকি। পড়াশুনা এবং টিউশনির পাশাপাশি একজন এস্কেচ আর্টিস্ট হিসাবে বিভিন্ন ছবি আঁকি। করণাকালীন ২০২০ সালে ছবি আঁকায় হাতে খড়ি। ইচ্ছা ছিল দেশসেরা কিছু একটা করার। সেই চিন্তা-চেতনা থেকেই আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনার প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসির প্রতিকৃতি আকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ছবিটি আঁকতে আমার ৫৬০ পিচ এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ লেগেছে। প্লাস্টিক পেইন্টিংয়ের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে ছবিটি তুলি দিয়ে অঙ্কন করেছি। আমার রুমের ভিতর বসে এই ছবিটি এঁকেছি। আলাদাভাবে কাগজে ছবিটি এঁকেছি পরবর্তীতে কাগজগুলো একত্রিত করেছি। ছবিটি আঁকতে আমার একমাসেরও বেশি সময় দিবারাত্রি পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছবিটি আজ ক্যাম্পাসে প্রদর্শনের জন্য আমার ডিপার্টমেন্টের প্রধানসহ অন্যান্য শিক্ষক এবং আমার সহপাঠীরা সহযোগিতা করেছেন। পরবর্তীতে ছবিটি আরও প্রদর্শন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ছবিটা মেসির কাছে পৌঁছানো হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। ভবিষ্যতে আমি একজন বড় স্কেচ আর্টিস্ট হতে চাই। এবং এমন কিছু করতে চাই যেটা গ্রিনিজ বুকে লিপিবদ্ধ হবে।
নয়ন মন্ডলের বড় ভাই মৃন্ময় মন্ডল বলেন, করনাকালীন ২০২০ সাল থেকে আর্টিস্ট হিসেবে ওর যাত্রা শুরু হয়। ও সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় ছবিটা এঁকেছে। আর্টিস্ট ওর খুব পছন্দের একটা বিষয়। সবার আশীর্বাদ এবং অনুপ্রেরণায় ও এগিয়ে গেছে এবং এতদূর আসতে পেরেছে। ওর চিন্তা ছিল বাংলাদেশের জন্য সেরা কিছু একটা করে দেখাবে। আজকে সেটা ও করে দেখালো, কাগজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেসির প্রতিকৃতি অঙ্কন করে। সামনে ওয়াল্ড রেকর্ডের মতো বড় কিছু একটা করে দেখাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
নয়ন মন্ডলের সহপাঠী অর্থনীতি অনামিকা বিশ্বাস বলেন, সাদা কাগজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেসির প্রতিকৃতি এঁকে নয়ন সফল হয়েছে। এজন্য ওর সহপাঠি হিসেবে আমি খুবই গর্বিত এবং অনেক ভালো লাগছে। ভবিষ্যতেও এর থেকে ভালো কিছু করে করবে এ প্রত্যাশা করি।
নয়নের আরেক সহপাঠী শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান বলেন এল এম টেন নামে ১৭ ফুট বাই ২০ ফুট মেসির যে চিত্রকর্ম। এটি এঁকেছে আমাদের বন্ধু নয়ন। আমরা একসাথে পড়াশোনা এবং ঘোরাফেরা করি। তার এই চিত্রকর্ম দেখে আমরা খুবই আনন্দিত এবং খুশি। এছাড়া আমার প্রিয় প্লেয়ার মেসির ছবি এঁটেছে দেখে আরো বেশি খুশি। দোয়া করি নয়ন আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাক। তার এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনো সাহায্য সহযোগিতা লাগলে আমরা সব সময় তার পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সেখ হুমায়ুন কবির নয়ন মন্ডলের অঙ্কিত সাদা কাগজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেসির প্রতিকৃতি প্রদর্শনীতে এসে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের কলেজের একজন স্টুডেন্ট আর্জেন্টাইন দলের বিখ্যাত ফুটবলার লিওয়েন মেসির সাদা কাগজে যে প্রতিকৃতি একেঁছে তার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা জানলাম এই প্রতিকৃতি বাংলাদেশের কাগজে আঁকা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি। কাগজে আঁকা এত বড় প্রতিকৃতি ইতিপূর্বে অন্য কোথাও প্রদর্শিত হয়নি। বিএল কলেজ ক্যাম্পাসে এটা প্রদর্শিত হচ্ছে জেনে ভালোই লাগছে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে এটি প্রদর্শনের জন্য যদি সে উদ্যোগ নেয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অনুরোধ করতে পারব। তিনি বলেন, ব্যক্তি নয়ন মন্ডল নয়, এ জাতীয় উদ্যোগ যারা নিবে, এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবে, তাদেরকে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।